সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ছ’মাস আগে জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্ট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে, শিলান্যাসের পরে আড়াই বছর কেটে গেলেও, জমিতে ইট গাঁথার কাজও শুরু হয়নি। গোড়া থেকেই সার্কিট বেঞ্চ ঘিরে টালবাহানা এবং অনিশ্চয়তার অভিযোগ জলপাইগুড়িতে নতুন নয়। তবে, নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই পুরসভা হোক বা লোকসভা, সব ভোটেই স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় নানা দাবির সঙ্গে সার্কিট বেঞ্চের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জলপাইগুড়ি শহরের প্রচারে গুরুত্ব পেয়েছে। ভোটপ্রচারে দেওয়াল লিখনে অথবা হোর্ডিং, ফ্লেক্সে সার্কিট বেঞ্চ শব্দটি লেখা নেই, এমন অতীতে হয়নি বলেই ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও, এবারে জলপাইগুড়িতে পুরভোটের প্রচার শুরু হয়ে গেলেও, দেওয়াল লিখন অথবা ফ্লেক্স, হোর্ডিঙে সার্কিট বেঞ্চ দ্রুত রূপায়ণের দাবির আর দেখা নেই।
শহরের প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই দাবি করেন, সার্কিট বেঞ্চ চালুর দাবি-ই ১৯৯৫ সালের পুরভোটে জলপাইগুড়িতে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। যদিও, এ বারের পুরভোটের প্রচারে সার্কিট বেঞ্চ ব্রাত্য বলেই আক্ষেপ করেছেন সার্কিট বেঞ্চ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা। তাঁদের আশঙ্কা, অনিশ্চয়তার কারণেই সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে বাসিন্দাদের আবেগ কমতে শুরু করেছে।
দ্রুত সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরুর দাবিতে জলপাইগুড়িতে অরাজনৈতিক একটি মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। সেই মঞ্চে সব রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সহ সব ক্ষেত্রের সংগঠনের প্রতিনিধিরাই ছিলেন। অবস্থান-অবরোধ, কর্মবিরতি, বনধ, মিছিল সবই হয় সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয় কমিটি নামে মঞ্চের ব্যানারে। সেই সব আন্দোলনের নেতাদের কথাতে শোনা গিয়েছে হতাশা। কমিটির সম্পাদক আইনজীবী কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোট প্রচারের সময় রাজনৈতিক দলগুলির সার্কিট বেঞ্চের দাবি নিয়ে প্রচার করাও আন্দোলনের থেকে কম কিছু নয়। এতে ইস্যুটা প্রাসঙ্গিত থাকত। তবে হয়ত, বতর্মান রাজ্যের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, তাতে হয়ত সার্কিট বেঞ্চের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছে।’’
জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন বসুও রয়েছেন সমন্বয় কমিটির অন্যতম দায়িত্বে। তিনি বলেন, ‘‘এবারের পুরভোটের কোনও দেওয়ালেই সার্কিট বেঞ্চের কথা দেখতে পাচ্ছি না। এটা অনেকটাই নজিরবিহীন। এক সময়ে কোনও ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীকেও সার্কিট বেঞ্চ দ্রুত চালুর আশ্বাস দিয়ে দেওয়াল লিখতে দেখেছি। হয়ত মানুষের মনের হতাশা রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে।’’
দু’হাজার বারো সালের ১ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সহ অন্য বিচারপতিরা শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী দু’বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও, প্রথম ক্ষেত্রে, ভবনের টেন্ডার নিয়েই সমস্যা তৈরি হয় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
রাজ্য সরকারের থেকে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি নির্মাণ সংস্থাকে দিয়ে স্থায়ী ভবনের কাজ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বরাদ্দ কম থাকায় সেই সংস্থাগুলি এগিয়ে আসেনি বলে জানা গিয়েছে। দু’দফায় টেন্ডার করার পরে একটি সংস্থা বরাত পায়। পরবর্তীতে ভবনের নকশা নিয়ে হাইকোর্ট থেকে আপত্তি জানানো হয়। সেই মতো নকশা বদলে ফেলে পূর্ত দফতর। হাইকোর্ট থেকে তার অনুমোদনও মিলিছে বলে জানা গিয়েছে। এই সব ধাপ পার হতেই শিলান্যাসের পরে আড়াই বছর পার হয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য দাবি করেছে, প্রচারের পরবর্তী ধাপে সার্কিট বেঞ্চের দাবি তুলে ধরা হবে। পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী মোহন বসুর কথায়, ‘‘সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করা আমাদের অন্যতম প্রধান দাবি, এটা শহরবাসী জানেন। আমাদের প্রচার পুস্তিকাতেও থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করতে আন্তরিক।’’ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পিনাকী সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘নিশ্চই সার্কিট বেঞ্চ প্রচারে থাকবে। আমাদের ইস্তেহারে রয়েছে।’’ সিপিএমের জলপাইগুড়ি সদর জোনাল কমিটির সম্পাদক জিতেন দাস বলেন, ‘‘সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে হতাশা তো তৈরি হয়েছে। তবে আমরা ভবিষ্যতে পথসভা এবং প্রচারে এর উল্লেখ্য করব।’’
রাজনৈতিক নেতারা যাই-বলুন না কেন, এবারের পুরভোটের দেওয়াল-ফ্লেক্সে সার্কিট বেঞ্চ এখনও পযন্ত ব্রাত্যই রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy