‘আত্মার চা’ ‘রক্তাক্ত’ নয়— পাহাড়ে এই প্রচার চলছে চা-পাতার ছবি দিয়েই। নিজস্ব চিত্র
‘ব্লাড টি’ বা রক্তাক্ত চায়ের বদলে ‘সোল টি’ বা আত্মার চায়ের প্রচার শুরু হল দার্জিলিং পাহাড়ে। গত বছর পুজোর আগে, চা বাগানের বোনাস নিয়ে পাহাড়ে রাজনৈতিক পরিবেশ গরম হয়ে ওঠে। দার্জিলিং চায়ের জন্য সরকার ভাবছে না বলে অভিযোগ করেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। অভিযোগ করা হয়, শ্রমিকদের রক্ত শোষণ করে বাগানে মুনাফা করা হচ্ছে। অজয় নিজের রক্ত চা গাছে দিয়ে দার্জিলিং চা এখন ‘ব্লাড টি’ বলে প্রচারে যান। ছ’মাস পরে, পঞ্চায়েত ভোটের আবহ পাহাড়়ে তৈরি হতেই পাল্টা প্রচারে নামলেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান অনীত থাপা।
গত রবিবার থেকে অনীত নিজের বক্তব্যের সমর্থনে প্রচার করছেন। জিটিএ প্রধান বলেন, ‘‘দার্জিলিং চা রক্তাক্ত নয়। এই চা আমাদের হৃদয়ের চা। আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চা। আমাদের পূর্বপ্র জন্ম, আমাদের মা-বাবা চা গাছকে সন্তানের মতো যত্ন করেছেন। একে রক্তাক্ত করা যায় না।’’ এ বিষয়ে অজয় এডওয়ার্ড এখনও নতুন করে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, ‘‘পাহাড়ের চা বাগানের কী অবস্থা, তা সকলেই দেখছেন। বাগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাগানের জমি নিয়ে অন্য ব্যবসা শুরু হয়েছে। প্রোমোটারেরা বাগানে ঢুকে পড়েছেন। শ্রমিকেরা মজুরি, পাওনা, জমির পাট্টা বা অধিকার হাতে পাননি। তা নিয়ে সমীক্ষা নানা আলোচনা চলছে। তা হলে দার্জিলিং চা কি আর আগের মতো রয়েছে! প্রতিদিন রক্তাক্তই তো হচ্ছে!’’
গত বছর পুজোর আগে, সমতলের সঙ্গে পাহাড়ের চা বাগানের বোনাস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাজ্য শ্রম দফতরের মধ্যস্থতায় ২০ শতাংশ হারে চা বাগানের বোনাস চুক্তি হয়। পাহাড়ের চা বাগান মালিকেরা ২০ শতাংশে শেষ অবধি রাজি হলে,ও দু’দফায় তা দেওয়ার কথা বলেন। প্রথমে ১৫ শতাংশ এবং পরে আরও পাঁচ শতাংশ দেওয়ার দাবি জানান। তা রাজ্য সরকার মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে হামরো পার্টির অভিযোগ। সমতলে কয়েকশো বাগানে এক সঙ্গে বোনাস আর পাহাড়ের ৮৭টি চা বাগানে দু’দফায় কেন, তা নিয়ে অজয় সরব হন। বাগান নিয়ে অজয় এডওয়ার্ড বনাম অনীত থাপার নতুন লড়াই চালু হয়। সেই সময় অজয় ‘ব্লাড টি’ বলায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। চা বাগান মালিকদের সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠিও লেখা হয়।
বাগান মালিকেরা অভিযোগ করেন, চা বাগানে নিজের হাতের রক্ত ছিটিয়ে দার্জিলিং চা-কে কলুষিত করা হয়েছে। এতে দেশ ও বিদেশে খারাপ বার্তা যাবে। এর পরে, হামরো পার্টি অবশ্য রক্তাক্ত চায়ের প্রচার আর বেশি টানেনি। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে, নতুন করে অজয়ের বিরুদ্ধে চা বাগান নিয়ে প্রচার শুরু করলেন অনীত। সব মিলিয়ে চা সংক্রান্ত আবেগকে সামনে রেখে রাজনীতি করা হচ্ছে বলেই মনে করছে পাহাড়ের রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy