তিন দিনের জন্য উত্তরবঙ্গ এসেছিলেন। ঠিক ছিল বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরবেন। তবে বুধবার উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি বৃহস্পতিবার থেকেও যেতে পারেন। অন্তত নেপালের পরিস্থিতি খানিক স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাল (আগামিকাল, বৃহস্পতিবার) যাওয়ার কথা। যদি সেটল্ না হয় আমাকে হয়তো থেকে যেতে হবে। সেটল্ হলে চলে যাব। কারণ, আমাদেরও তো একটা দায়িত্ববোধ আছে।’’
উত্তরবঙ্গ থেকে নেপালের দূরত্ব খুব বেশি নয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। তা ছাড়া বাংলার অনেক পর্যটক নেপালে আটকে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতা না-ও ফিরতে পারেন। যদিও নেপাল প্রসঙ্গে বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন এটা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়। দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপার। এ নিয়ে যা বলার কেন্দ্র বলবে। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে দ্রুত শান্তি ফিরুক, সেটাই চান। নেপাল প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ওরা দুর্দিনে সাথী হওয়ার চেষ্টা করেছে। সে রেল অ্যাক্সিডেন্ট হোক কিংবা জলপাইগুড়ির সাইক্লোন হোক বা মাল নদীর জলে ভেসে যাওয়াই হোক।’’ তা নিয়ে আরও বলেন, ‘‘নেপালে তো বামপন্থী সরকার ছিল। আমাদের সঙ্গে তো সম্পর্ক নেই। তবে আমরা চাই, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভাল থাকুক।’’
বুধবার জলপাইগুড়িতে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি শেষ করে উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গের আট জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশের বহু পর্যটক নেপালে আছেন। বাংলার মানুষও রয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যাঁরা যোগাযোগ করছেন,তাঁদের বলছি, হুট করে বেরোবেন না। একটু সবুর করুন। আমরা ব্যবস্থা করছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ রাজনীতির চেষ্টা করবে। সে দিকে নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে। তাঁর কথায়, ‘‘এই অবস্থায় কেউ কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইবে। আমি বলব সতর্ক থাকতে। কারণ, কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থে এগুলো করে।’’
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার অগ্নিগর্ভ নেপালে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝলনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের। জানা যায়, ‘জেন জ়ি’-র আন্দোলন-বিক্ষোভের সময় তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতেই আটকা পড়েন রাজ্যলক্ষ্মী। কাঠমাণ্ডুর দাল্লু এলাকায় বাড়ি থেকে তাঁকে উদ্ধার করে কীর্তিপুর বার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান তিনি।’’ ওই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘নেপালে তো মাওবাদী, বামপন্থীর সরকার। আমাদের তো বামপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমার একটা জিনিস খারাপ লেগেছে। যেটা আমার বলা উচিত নয়। আমি বলছিও না, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বলে। বাংলা মানবিকতার কথা বলে। জাগরণের জন্ম হয়। সেখানে এক জন জীবন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করা, এগুলো মানবিকতার অঙ্গ হতে পারে না। কিছু সুযোগসন্ধানী থাকেন, এই পরিস্থিতির সুযোগ নেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলেরও কেউ যদি কোনও অন্যায় করে থাকেন আমি অ্যাকশন নিয়েছি। তোমরা অনেক কেস জানো, আমি নিজেদের লোককে গ্রেফতার করিয়েছি। আমার কাছে মানুষ আগে, পরে অন্য কিছু।’’