Advertisement
০৭ মে ২০২৪
ভোটের পরে শাসকের সন্ত্রাস

কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ভোটকর্মী প্রহৃত জলপাইগুড়িতে

ভোট থেকে ফেরার পথে একজন ভোটকর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল সদস্যদের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত ব্যক্তির অভিযোগ, তিনি সিপিএমের শাখা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলেই তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।

(বাঁ দিকে) জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি মারধরে আহত গৌর রায়। (ডান দিকে) ঘটনায় আতঙ্কিত গৌরবাবুর ছেলে ও মেয়ে। ছবি: সন্দীপ পাল।

(বাঁ দিকে) জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি মারধরে আহত গৌর রায়। (ডান দিকে) ঘটনায় আতঙ্কিত গৌরবাবুর ছেলে ও মেয়ে। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২০
Share: Save:

ভোট থেকে ফেরার পথে একজন ভোটকর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল সদস্যদের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত ব্যক্তির অভিযোগ, তিনি সিপিএমের শাখা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলেই তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। মারধরের সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে এবং আড়াই বছরের নাতিও আক্রান্ত হয়। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি শহরের শিরিষতলা এলাকায়।

আক্রান্তের নাম গৌর রায়। তিনি কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্য। এখন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অন্য পক্ষের অভিযোগ গৌরবাবুই গালাগালি করে দু’জনকে মারধর করেন। তারপরই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাতে দু’পক্ষই কোতোয়ালি থানায় যান। দু’পক্ষ থেকেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, “গৌরবাবু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। পুলিশ এলাকায় গিয়েছিল। তারা সবাই পলাতক।”

গৌরবাবুর ভোটের ডিউটি পড়েছিল ধুপগুড়ির পাটকাদহ হাই মাদ্রাসায়। সেখান থেকে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অস্থায়ী নির্বাচন কেন্দ্রে ফেরেন। সেখান থেকে রাত পৌনে এগারোটার সময় জলপাইগুড়ি শহরের শিরিষতলা এলাকায় একটি টোটোতে করে বাড়ি ফেরেন। মূল রাস্তা থেকে তাঁর বাড়ি ১০০ মিটার দূরে একটা গলির ভিতর। তাঁর অভিযোগ, টোটো থেকে নামার পরই কয়েকজন তৃণমূল সমর্থক তাঁকে গালিগালাজ করে এবং তার উপর চড়াও হয়। সিপিএম করার জন্য তাঁকে মারধর করা হয় বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি গলির মধ্যে চলে আসলে সেখানে তাড়া করে তাঁকে ফেলে পেটানো হয়।

তাঁকে বাঁচানোর জন্য তাঁর স্ত্রী, বিবাহিত মেয়ে এবং ছেলে বার হলে তাঁদের মারধর করা হয়। মেয়ের কোলে তার দু’বছর নয় মাস বয়সের শিশু ছিল। সেও আঘাত পায়। বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া ভেঙে দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সমীর দাস তাঁদের দলের সদস্যদের ফোন করে চলে আসতে বললে, তাঁরা চলে যান। এই ঘটনার পর গৌরবাবু তাঁর প্রিজাইডিং অফিসারকে সব কিছু জানান। তারপর থানায় যান। পরে হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে বেডে শুয়ে গৌরবাবু বলেন, “আমাকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য বহু দিন ধরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। রবিবার রাতে একা পেয়ে তারা আমাকে মারধর করে। এলাকার কাউন্সিলার এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত।”

২১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিষতলা এলাকার কাউন্সিলার সমীর দাস ঘটনার সময় হাসপাতালে ছিলেন। তাঁর বাবা অসুস্থ। তিনি বলেন, “ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি টোটো থেকে নামার পর তাকে দু’জন ছেলে জিজ্ঞাসা করে, কেমন ভোট হল? তাতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের গালাগালি দেন। ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং একজনের আঙুল কামড়ে দেন। এরপর খবর পেয়ে পাড়ার লোকজন গিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ করে। তখন একটু ধাক্কাধাক্কি হয়। যারা গিয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের দলের সদস্য বলে আমাদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।” গৌরবাবু সে সময়ে একা ছিলেন না। তার সঙ্গে তাঁর দুই শালাও ছিল বলে তিনি জানান।

গৌরবাবুর সঙ্গে প্রথমে যাদের মারামারি হয় তারা হল মিঠু সরকার, শান্তনু অধিকারী এবং কৌশিক অধিকারী। কৌশিকের হাতের কড়ে আঙুল ভেঙেছে, শান্তনুর আঙুলে কামড় দেওয়া হয়। রবিবার রাতেই মিঠু সরকার এবং শান্তনু অধিকারী জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় গৌরবাবু এবং তাঁর দুই শালার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার গৌড় রায়ের স্ত্রী কবিতা রায় ৫ জনের জনের বিরুদ্ধে কতোয়ালি অভিযোগ দায়ের করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc vote crime beaten
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE