Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্নায়ুর যুদ্ধ যেন শুরু দাড়িভিটে

এই পরিস্থিতিতে এ বার যেন দু’পক্ষের মধ্যে একরকম স্নায়ুর যুদ্ধই শুরু হল। প্রশাসন তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। কিন্তু কোর্টের রায় প্রশাসনকে মান্য করতেই হবে। সেক্ষেত্রে কিভাবে তা দ্রুত তারা করতে পারে, তার দিকে নজর সকলেরই।

নির্দেশ: স্কুলের মাঠে নিহতদের পরিবারের লোকজনদের আদালতের রায় পড়ে শোনাচ্ছেন বিডিও। নিজস্ব চিত্র

নির্দেশ: স্কুলের মাঠে নিহতদের পরিবারের লোকজনদের আদালতের রায় পড়ে শোনাচ্ছেন বিডিও। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

দাড়িভিট হাইস্কুলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বৃহস্পতিবার স্কুলের ক্যাম্পাস থেকে সমস্ত ব্যানার পোস্টার খুলে ফেলার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুল থেকে পোস্টার, ব্যানার খোলা যায়নি। স্কুলের মাঠে দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত দুই যুবকের পরিবার আগের মতোই মঞ্চ বেঁধে বসে রয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে এ বার যেন দু’পক্ষের মধ্যে একরকম স্নায়ুর যুদ্ধই শুরু হল। প্রশাসন তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। কিন্তু কোর্টের রায় প্রশাসনকে মান্য করতেই হবে। সেক্ষেত্রে কিভাবে তা দ্রুত তারা করতে পারে, তার দিকে নজর সকলেরই। উল্টো দিকে, নিহতদের পরিবারও তাঁদের দাবি থেকে নড়তে নারাজ। প্রশাসনের চাপের সামনে তাঁরা কত ক্ষণ অনড় থাকতে পারেন, তা-ও দেখার।

এ দিন মহকুমাশাসক প্রথমে ফোন করে আদালতের নির্দেশের বিষয়টি নিহত পরিবারের লোকদের জানান। তা নিয়ে নিহতের পরিবার ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানান, মহকুমাশাসক মাঠে এলে তারপরেই তাঁরা পোস্টার, ব্যানার খুলবেন।

এরপরে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ আদালতের রায়ের কপি নিয়ে নিহতদের অভিভাবকদের সঙ্গে প্রথমে দেখা করেন স্কুলের দায়িত্বপ্রান্ত প্রধান শিক্ষক অনিল মণ্ডল-সহ অন্য শিক্ষকরা।

প্রায় পৌনে পাঁচটা নাগাদ দাড়িভিট স্কুল মাঠে পৌঁছন বিডিও শতদল দত্ত। ধর্না মঞ্চে নিহত পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করে স্কুল চত্বর থেকে ব্যানার পোস্টার খুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ৬টা নাগাদ তিনি বেরিয়ে যান। প্রধানশিক্ষক অনিলবাবু তাদের অনুরোধ করে জানান, স্কুলের থেকে পোস্টার খুলে নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নিহত রাজেশ সরকারের বাবা নীলকমলবাবু ও তাপস বর্মণের বাবা বাদলবাবুর বক্তব্য, মহকুমাশাসক স্কুলে আসুক, তারপর তাঁরা স্কুলের ব্যানার খুলবেন। সন্ধ্যার পর অন্ধকারের মধ্যে মঞ্চের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বসেছিলেন নিহতদের পরিবারের লোকেরা। কেউ যাতে তাঁদের অমতে ব্যানার খুলতে না পারে, সে জন্য সার রাত বসে থাকবেন বলেও জানান।

নীলকমলবাবু ইসলামপুরের মহকুমাশাসক মণীশ মিশ্রকে ফোনে জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যানার কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেরা শহিদ হয়েছে। তাদের জন্য ন্যায় বিচার চেয়ে আমরা ব্যানার পোস্টার দিয়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতে ঠিক কোন দিকে ঘটনা মোড় নেয়, তার দিকে টানটান নজর রয়েছে গোটা দাড়িভিটের।

বিশেষ করে, মাত্র একদিন পরেই রবিবার দাড়িভিট মাঠে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সভা করার কথা রয়েছে। শুভেন্দুবাবুকে সভা করতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছিলেন রাজেশ ও তাপসের পরিবারের লোকজনেরা। শুভেন্দুবাবুর সভার জন্য মঞ্চ পর্যন্ত বাঁধতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল দাবি করেছে, সভা হবেই। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শাসক দল কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার দিকেও তাকিয়ে রয়েছে দাড়িভিট।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, কোথায় সভা হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। সেই নির্দেশ মেনেই কোথায় সভা হবে, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’’ এ দিন দাড়িভিটে নদীর পাড়ে এলাকার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের পণ্ডিতপোতা ২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি তথা দাড়িভিট এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুবোধ মজুমদার বলেন, ‘‘সভা হচ্ছেই। সেক্ষেত্রে খুব কম সময়ে করা যায় এমন মঞ্চ তৈরি করতে হলেও করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE