লোহার কড়াইতে ফুটছে ভাত। খুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে রান্নায় ব্যস্ত সফিকুল ও দীপক। পায়েল ও রাহুলের (নাম পরিবর্তিত) চার হাত এক করতে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে যাবতীয় আয়োজন করলেন সফিকুল আলম ও দীপক উপাধ্যায়ের মতো এক দল যুবক। মঙ্গলবার রাতে সম্প্রীতির ছবি দেখা গেল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গলে।
ভিঙ্গলের পায়েল প্রামাণিকের (নাম পরিবর্তিত) বাবা ক্ষৌরকার। তবে তিনি অসুস্থতার কারণে ঠিক মতো কাজ করতে পারেন না। ছেলে কোনও রকমে কাজটি করে সংসার চালান। পায়েলের বিয়ে ঠিক হয় মানিকচকের রাহুল প্রামাণিকের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। বিয়েতে রাহুলদের কোনও দাবি ছিল না। তবুও বিয়ের নিয়ম রক্ষার জন্য ন্যূনতম আয়োজনেরও ক্ষমতা ছিল না পরিবারটির।
ওই রাতে জীর্ণ টালির বাড়িটি ঝলমলিয়ে উঠল রঙিন আলোয়। ভাত, ডাল, ফ্রায়েড রাইস, মাছ, চাটনি, দই, মিষ্টি পাত পেড়ে খেলেন আমন্ত্রিতেরা। বরযাত্রীদের আপ্যায়নে দেওয়া হয় টিফিনও। এই আয়োজনে দুঃস্থ পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ালেন হরিশ্চন্দ্রপুরের লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিকুল আলম, ওই স্কুলেরই এক পার্শ্বশিক্ষক দীপক উপাধ্যায়, মালদহের এক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী আলমগির খান, সানু ইসলামদের মতো এক দল যুবক। কনের বাবা বলেন, “তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমার অভাবের সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে কোনও রকমে দিয়েছি। ছোট মেয়ের বিয়েতে পাত্রপক্ষের দাবি না থাকলেও রীতি মেনে মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সফিকুল, দীপকেরা সব সামলে ধুমধাম করে মে বিয়ে দিলেন। তাঁদের মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছি।”
সফিকুল বলেন, “হিন্দু, মুসলমান বলে সমাজে ধর্মের বিষ ছড়ানো হচ্ছে। সেই বিষ থেকে সমাজকে মুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ ভাবেই আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।” দীপক এ দিন বলেন, “মেয়ের বাবার অসহায় অবস্থার কথা জানতে পেরে আমরা বিয়ের আয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ভাল লাগছে। আর কে হিন্দু, কে মুসলিম, তা ভাবার সময় নেই। আমরা সবাই মানুষ।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)