চলন্ত বাস থেকে এক তরুণীর ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনায় পুলিশ তদন্তে ঢিলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, যে ঘটনার মধ্যে নির্ভয়া কাণ্ডের ছাপ দেখছেন অনেকে, সেই রকম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্তে পুলিশ শুরু থেকে যথেষ্ট তৎপরতা দেখায়নি। শনিবার তরুণীর পরিবারের অভিযোগ জমা হওয়ার পরেও প্রথমে সেটি স্রেফ জেনারেল ডায়েরি করে রাখা হয়। পরে ওই ব্যাপারে মামলা রুজু হয়। যার জেরেই রবিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত ওই বাস বা অভিযুক্ত কর্মীদের চিহ্নিত করা যায়নি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল অবশ্য বলেন, “পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বাস চিহ্নিত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ব্যাপারে চেষ্টা হচ্ছে।” এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “পুলিশ সক্রিয় হলে বাস চিহ্নিত করতে এতটা সময় লাগত না। কাউকে আড়াল করতেই এমন নিষ্ক্রিয়তা কি না, তা দেখা দরকার।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “পুলিশ চাইলে গাড়ির নম্বর উদ্ধার সামান্য সময়ের ব্যাপার। পুলিশের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেই কোনও বৈঠক বা জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি বলে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় কোচবিহার বাসস্ট্যান্ড থেকে দিনহাটাগামী একটি বাসে ওঠেন দেওয়ানহাটের বাসিন্দা ওই তরুণী। তিনি ধূপগুড়ির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। কোচবিহারে নেমে বাড়ি ফেরার জন্য ওই বাসে উঠেছিলেন। অভিযোগ, ফাঁকা বাসে তরুণী ওঠার পরেই চালক বোর্ড বদলে ‘রিজার্ভ’ বোর্ড লাগিয়ে দেন। এমনকি তরুণী থামতে বললেও বাসের গতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কন্ডাক্টরও নামতে বাধা দেন। খারাপ উদ্দেশ্য আঁচ করে তরুণী চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন।
কিন্তু পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টির তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, শনিবার রাতে ও রবিবার পুলিশের তদন্তকারীরা বাসস্ট্যান্ডে যান। তরুণীর আত্মীয়দের সঙ্গেও বলা হয়েছে। তরুণীর বক্তব্যও শোনা হয়। বাস মালিক সংগঠন কর্তাদের সঙ্গেও ওই ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। কোচবিহার জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সম্পাদক অনুপ অধিকারী বলেন, “আমরা ওই ব্যাপারে সব সাহায্য করছি।” কোচবিহার জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক সঞ্জিত পন্ডিত বলেন, “শনিবার রাতে পুলিশ স্ট্যান্ডে এসেছিল। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরাও চেষ্টা করছি।” ওই সংগঠনের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, সাদা, সবুজ রঙের কোনও মিনিবাস ওই সময় স্ট্যান্ড থেকে ছাড়েনি। অন্য কোনও স্ট্যান্ডের গাড়ি ফাঁকা ফেরার সময় ওই তরুণীকে তুলেছিল, এমন হতে পারে।
বাসকর্মী সংগঠনগুলিও এ নিয়ে ধন্দে রয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভাবিত বেসরকারী যাত্রী পরিবহণ কর্মী ইউনিয়নের নেতা অজিত অধিকারী বলেন, “পিকনিকের মরসুমে অনেক বাস সময়সূচি মতো চলছে না। পুলিশ দেখুক।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা প্রাণেশ ধর বলেন, “কাউকে আড়ালের ব্যাপার নেই। তদন্তে কারও দোষ প্রমাণ হলে আইন আইনের পথে চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy