Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
আজ বৈঠক তরাই-ডুয়ার্সের বাগানে বোনাস নিয়ে
Tea Garden Workers bonus

পাহাড়ের বাগানে বোনাস-জট, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কাল

দার্জিলিং পাহাড়ে বড়, মাঝারি মিলিয়ে ৮৭টি চা বাগান রয়েছে। ২০২২ সালে বাগানে শ্রম দফতরের হস্তক্ষেপে ১৫ শতাংশ এবং পাঁচ শতাংশ—দুই ভাগে মালিকেরা বোনাস দেয়।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২০
Share: Save:

দার্জিলিং পাহাড়ের চা বাগানের শ্রমিকদের পুজো বোনাস নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে। এ বার শ্রমিক সংগঠনগুলি ২০ শতাংশ হারে বোনাস চাইলেও, মালিক পক্ষ বৈঠক করে ৮.৩৩ শতাংশের বেশি হারে বোনাস দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কাল, শুক্রবার পাহাড়ের বাগানগুলির শ্রমিক সংগঠন, মালিক পক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে শ্রম দফতর। কিন্তু তার আগে, বুধবার এক বৈঠকের পরে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের ন’টি সংগঠনের ঘোষণা, মালিক পক্ষ অনড় থেকে যুক্তি মেনে ‘যথাযথ’ বোনাস না ঘোষণা করলে, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন হবে। প্রয়োজনে, পাহাড় বন‌্ধের ডাক দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির।

অন্য দিকে, তরাই এবং ডুয়ার্সের ১৭৬টি বাগানের চা শ্রমিকদের বোনাস নিয়ে কলকাতায় বুধবারের বৈঠকেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মালিক পক্ষের তরফে ১০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলি মত জানায়নি। আজ, বৃহস্পতিবার ফের বৈঠক হওয়ার কথা।

শ্রম দফতরের নর্থ বেঙ্গল জ়োনের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘পাহাড়ের চা বাগান নিয়ে এখনও বোনাসের কিছু সুরাহা হয়নি। ২০ সেপ্টেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। আলোচনায় কোনও রাস্তা বেরোবে বলে আশাবাদী।’’

দার্জিলিং পাহাড়ে বড়, মাঝারি মিলিয়ে ৮৭টি চা বাগান রয়েছে। ২০২২ সালে বাগানে শ্রম দফতরের হস্তক্ষেপে ১৫ শতাংশ এবং পাঁচ শতাংশ—দুই ভাগে মালিকেরা বোনাস দেয়। ২০২৩ সালে ১৯ শতাংশ হারে বোনাস হয়েছিল। এ বার জট পেকেছে। পাহাড়ের ন’টি শ্রমিক সংগঠন ইতিমধ্যে ‘পার্বত্য শ্রমিক সংগঠন সমন্বয় মঞ্চ’ তৈরি করেছে। তাতে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, সিপিএম, জিএনএলএফ, তৃণমূলের মতো সব রাজনৈতিক দলের সংগঠন রয়েছে। শ্রমিকদের প্রশ্নে সকলে এক মঞ্চে এসে লড়াই শুরু করেছে। আপাতত প্রতিদিন বাগানগুলিতে আধ ঘণ্টা করে ২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবিতে ‘গেট মিটিং’ শুরু হয়েছে।

দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের হাতে থাকা বাগানের মালিক পক্ষের পাল্টা দাবি, গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি ভাল নয়। বাগানের উৎপাদন কমেছে। চা পাতার উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। বহু বাগানই লোকসানের মুখোমুখি। এতে আগের মতো হারে বোনাস দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে ন্যূনতম হারেই তাঁদের পক্ষে বোনাস দেওয়া সম্ভব বলে সংগঠনগুলিকে জানিয়ে শ্রম দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর পাহাড়ে একটিই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে।

শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক বলেন, ‘‘এক বার আলোচনা করেই মালিক পক্ষ শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় চলে গেলেন। পাহাড়ের রীতি মেনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেননি। আমরাও নিজেদের অবস্থানে অনড় আছি। প্রয়োজনে, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চলবে।’’ তিনি জানান, যৌথ মঞ্চ বুধবার শ্রম দফতরে চিঠি দিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক পাহাড়ে করা শুধু নয়, এ মাসের মধ্যে বোনাস চূড়ান্ত করার দাবিও জানিয়েছে। সরকার পক্ষের শ্রমিক সংগঠনের তরফেও শ্রমিকদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

তরাই-ডুয়ার্সে প্রায় পৌনে তিনশো চালু বাগান আছে। শ্রমিক পক্ষ সেখানেও ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি রেখেছেন। এ দিন তা নিয়ে কলকাতায় বৈঠকে বসেন ১৭৬টি বাগানের মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক নেতৃত্ব। আগেও এ ব্যাপারে দু’টি বৈঠক হয়েছে। মালিক পক্ষের তরফ থেকে এ দিন দশ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলির মতামত চাওয়া হয়। ঘণ্টা পাঁচেক বৈঠকের পরেও শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে মতামত দেওয়া হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ফের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গিয়েছে।
সহ প্রতিবেদন: কৌস্তভ ভৌমিক

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Tea Darjeeling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE