“পুলিশ কি আমাকে ধরতে পারে!”, বার বার প্রশ্ন করছেন দীপঙ্কর সরকার। উদ্বিগ্ন তাঁর বাড়ির লোকেরাও। শুক্রবার সকালে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের দক্ষিণ রামপুরে দীপঙ্করদের বাড়িতে ঠাসাঠাসি ভিড়। পড়শিরা বলাবলি করছেন, “এরা কোন কাল থেকে এখানে থাকে। অনুপ্রবেশকারী হবে কী করে!” কোচবিহারের যে চার জন অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে ‘এনআরসি নোটিস’ পেয়েছেন, দীপঙ্কর তাঁদের অন্যতম।
দীপঙ্কর জানান, ২০১৪ সাল থেকে অসমের গুয়াহাটির পল্টনবাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছেন। এখনও সেখানে কাজ করেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে অসম পুলিশ তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জনকে বাংলাদেশি সন্দেহে থানায় ডেকে পাঠায়। ভোটার ও আধার কার্ড দেখেও সন্দেহ না মেটায়, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকা, সেই সঙ্গে পুরনো জমির কাগজও দেখানোর নির্দেশ দেয়। সব নথি সংগ্রহ করে অসমের থানায় গিয়ে দেখান বছর একত্রিশের দীপঙ্কর। সেই সময়ে আঙুলের ছাপ নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পরে দীর্ঘ সময়ে আর কোনও ডাক আসেনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাঁর বাড়িতে ‘এনআরসি নোটিস’ পৌঁছয়। অভিযোগ, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অসমে ছিলেন। প্রথমে তাতে গুরুত্ব দেননি। মার্চে ফের নোটিস পান তিনি। এ বারে অসমের আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে জুলাই মাসে আদালতে গিয়ে সব নথি জমা দিয়ে গ্রামে ফেরেন।
দিন তিনেক আগে দুই সিভিক কর্মী দীপঙ্করের খোঁজ নিতে দক্ষিণ রামপুর গ্রামের বাড়িতে যান। তার পরেই চিন্তায় পড়েন দীপঙ্কর। তাঁর দাদা শঙ্কর বলেন, “দু’বার এনআরসি নোটিস এসেছে। ভাইকে অসমে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি।” পরিবারটির পড়শি বাদল সরকার বলেন, “দীপঙ্করকে এখানে জন্মাতে দেখেছি। অসম সরকার ঠিক বলছে না।”
এ দিন দীপঙ্করের বাড়িতে গিয়ে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক দাবি করেন, “বিধানসভা ভোটের আগে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে পরিকল্পিত ভাবে এই নোটিস দেওয়া হচ্ছে।” তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা পাল্টা বলেন, “এ সব নোটিস পুরনো। রাজনৈতিক কারণে এখন সামনে এনে তৃণমূল মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে।” দীপঙ্করের বক্তব্য, “আইনজীবী বলেছেন, অগস্টে এই মামলা শেষ হবে। আতঙ্কে রয়েছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)