উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরেই সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে। এই বছরেও কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল বোর্ডের রিপোর্টে ধরা পড়েছে, জল তোলা তো কমেইনি বরং তা বেড়েছে জেলায়। তা করতে গিয়েই বিপদগ্রস্ত বিভিন্ন ব্লক, মাটির তলায় আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের বিষ বাড়ছে।
চাষের জন্য ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ করতে তিনটি বিকল্প দরকার বলে দাবি করছেন কৃষি ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত সেচের জল নদী থেকে খাল খুঁড়ে চাষের জমি পর্যন্ত আনা দরকার। বৃষ্টির জল ধরে রাখার বড় প্রকল্প করা দরকার এবং ছোট ছোট পুকুর খুঁড়ে সেচের জল ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পিছিয়ে রয়েছে। কেন?
সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বিভিন্ন কৃষকের জমিতে পুকুর খোঁড়ার কাজ বেশ চলছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ওই টাকা বন্ধ করার পরে তা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে স্বীকার করছেন জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। কেবল তাই নয়, আত্রেয়ীর মত বড় নদী থেকে খাল খুঁড়ে চাষের জল মাঠ পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের রাবার ড্যাম। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার মোহনপুরের ওই রাবার ড্যাম থাকায় নদীতে জল পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সেচ-সেবিত এলাকা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া যাচ্ছে না বলে সেচ দফতরের দাবি।
জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের বাস্তুকারেরা দাবি করছেন, মাটি থেকে অতিরিক্ত জল তুলে ফেলা হলেই আর্সেনিক এবং ফ্লোরাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কুশমন্ডি, হিলি, কুমারগঞ্জের মতো ব্লকগুলিতে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে এ বছরের রিপোর্টে। দফতরের কৃষি সেচ বিভাগের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার প্রিয়তনু হালদার বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সচেতনতাও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় রিপোর্টে যে সব ব্লকে জলের গুণমান খারাপ বলা হয়েছে, সেগুলিতে জল উত্তোলন কড়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বৃষ্টিপাতের ঘাটতি নেই, ভূগর্ভস্থ জল তোলায় নিয়ন্ত্রণ আনলেই আর্সেনিক এবং ফ্লোরাইডের বিষ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)