অমিয় দেববক্সি
রাজ পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে মদনমোহন দেবের রথযাত্রার সূচনা করতেন তিনি, রথের রশিতে প্রথম টান দিয়ে। রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী বড়দেবী পুজোর ‘দেওদেখা’তেও থাকতেন। দোল সওয়ারি থেকে বড়দেবী পুজোর নানা পর্বেও তাঁর উপস্থিতি অনিবার্য ছিল। এ বারেও অষ্টমী পুজোর দিন অঞ্জলি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। স্নান সেরে তৈরি হওয়ার সময় আচমকাই অসুস্থ বোধ করায় শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। ওই দিন দুপুরে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হন রাজ পরিবারের ‘দুয়ারবক্সি’ অমিয় দেববক্সি।
পুজোর আবহে অমিয়বাবুর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই, শোকের ছায়া নেমে আসে কোচবিহারে। পাশাপাশি, অমিয়বাবুর শূন্যস্থানে এবার কে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জল্পনা শুরু হয়েছে দেবোত্তরের ট্রাস্ট বোর্ডের অন্দরেও।
কোচবিহার শহরের গোলবাগান এলাকায় অমিয়বাবুর বাড়ি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। স্ত্রী ইন্দিরা দেবী ও তিন মেয়েকে রেখে গিয়েছেন তিনি। বংশানুক্রিকভাবে দেববক্সি পরিবারের সদস্যরা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ‘ দুয়ারবক্সি’ পদের দায়িত্ব সামলান। মহারাজার প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রীতি পালনের দায়িত্ব পালন করেন ‘দুয়ারবক্সি’। অমিয়বাবু আমৃত্যু ওই দায়িত্ব সামলেছেন।
অমিয়বাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “রাজ আমলের নানা ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণকে কাছ থেকে দেখেছেন। চোখে দেখা রাজ ইতিহাস বলার মতো, একজনকে হারালাম। এটা অপূরণীয় ক্ষতি।” মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান দেবোত্তরের সভাপতি কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা, বিধায়ক মিহির গোস্বামী, সিপিএম কাউন্সিলর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত এবং আরও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। ডোডেয়ারহাট শ্মশানে অমিয় দেববক্সির শেষকৃত্যের দায়িত্ব সহকারে পালন করে দেবোত্তর ট্রাস্ট।
দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিয়বাবুর মৃত্যুর জেরে অষ্টমীর রাতে বড়দেবীর গুপ্তপুজোয় রাজ পুরোহিতই তাঁর দায়িত্ব সামলান। তবে পাকাপাকি ভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না সে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে প্রয়াত অমিয়বাবুর ভাই অজয় দেববক্সির নামও অনেকের মুখে ঘুরছে। দাদার অসুস্থতার সময় একাধিকবার তিনি রীতি পালন করেন। দেবোত্তরের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “রাজ আমলের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তিনি ছিলেন একটা যোগসূত্র। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি মনে থাকবে। তাঁর অবর্তমানে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা রাজপুরোহিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মত নিয়ে বোর্ডে আলোচনা হবে।” দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য প্রসেনজিৎ বর্মণ বলেন, “সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
স্মৃতিমেদুর অনেকেই। দেবোত্তর ট্রাস্টের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “অষ্টমীতে গাড়ি পাঠানো হলেও ফাঁকা গাড়ি ফিরল। তাঁর অঞ্জলি দিতে না পারার আক্ষেপটা ঘুচবে না।” গবেষক দেবব্রত চাকি বলেন, “মহারাজার প্রতিনিধি হিসেবে দুয়ারবক্সি নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতেন। দেখেছি অমিয়বাবু নিষ্ঠার সঙ্গেই সমস্তরকম দায়িত্ব পালন করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy