Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in North Bengal

নিয়ন্ত্রণের অভাবেই সংক্রমণ

করোনা সংক্রমণে যেখানে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতে সুস্থতার হারও আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তখন শিলিগুড়ির এই অবস্থা কেন?

এখন সব বন্ধ। বাজার সুনসান। নিজস্ব চিত্র

এখন সব বন্ধ। বাজার সুনসান। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০৬:১৬
Share: Save:

গত ১৫ মে শিলিগুড়ি শহরে করোনা সংক্রমিত ছিলেন মাত্র সাত জন। ১০ দিন পরে ২৫ মে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ জনে। মাস ঘুরতে পরিস্থিতি যেন আমূল বদলে গিয়েছে। এখন শহরে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াইশো ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। করোনা সংক্রমণে যেখানে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতে সুস্থতার হারও আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তখন শিলিগুড়ির এই অবস্থা কেন? এর জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্বে যখন দেশ জুড়ে লকডাউন ছিল, সেই সময়ে ভিন্ রাজ্য থেকে বাজারে গাড়ির প্রবেশ, সেই সব এলাকা ঠিক ভাবে জীবাণুমুক্ত না করা, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা চালক ও খালাসিদের সঠিক ভাবে পরীক্ষা না করা, বাজারে সাধারণ মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ঘোরাফেরাই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অনেকে।

কী ভাবে? উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফল বিক্রেতার কথা। তিনি নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত বাজারে যাতায়াত করতেন। সেখান থেকেই তিনি সংক্রমিত হন বলে সন্দেহ। দ্বিতীয় উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পরে মাছ বাজারের এক ব্যবসায়ীর সংক্রমণ মেলে। তাঁর বাড়ি ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এখন ৫৩ জন।

শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী জানান, বাজারে সামাজিক দূরত্ব না মেনে, মাস্ক না পরে মানুষ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। বাজারে এক-দু’জন আক্রান্ত হলে সেখান থেকে কয়েকশোর মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এখন শহরের বাজারগুলি বন্ধ রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে প্রশাসন, পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য ফেরতদের সরকারি কোয়রান্টিনে রাখা হয়নি ঠিক মতো। চিকিৎসকরা বারবার বলেছিলেন। হোম কোয়রান্টিনও অনেকে মানেননি। তার ফলই ভুগতে হচ্ছে।’’

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, লকডাইন চালুর পরেই বেড়েছে সংক্রমণ। এবং তার ছড়িয়েছে বাইরে থেকে আসা লোকেদের থেকেই। শিলিগুড়ির নয়াবাজার বা চম্পাসারির পাইকারি বাজারেও ভিন্ রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে গাড়ি আসে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও নিয়ন্ত্রিত বাজার এবং এই বাজারগুলি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অথচ তা শুরুতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। জেলাশাসক এস পুন্নম বলম, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যরা জানান, সংক্রমিত এলাকাগুলিতে কনটেনমেন্ট জ়োন করে, বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা করে, প্রয়োজন মতো বাজারগুলি বন্ধ রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লকডাউন শিথিল যখন হয়, তখন কিন্তু সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। তার খেসারত শিলিগুড়িকেও দিতে হচ্ছে।’’ সংশ্লিষ্ট লোকজনেরা অভিযোগ করছেন, জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডের যে সব বাসিন্দা ভিন্ রাজ্য থেকে এনজেপি স্টেশন হয়ে ফিরেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য তা নিয়ে স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসককেও বারবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি নজর সে ভাবে দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। এই নিয়ে কোনও জেলা প্রশাসনই এখন কিছু বলতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE