রায়গঞ্জ শহরের তুলসীতলা এলাকার বাসিন্দা বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধ পরেশ সেনগুপ্ত মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরেশের ছেলে পেশায় শিক্ষক সৈকত বলেন, “বাবার অক্সিজেন লেভেল কমে ৯০য়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। তখনই রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকার বাসিন্দা কৌশিক চক্রবর্তীকে ফোন করি। পনেরো মিনিটের মধ্যে তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে বাবাকে অক্সিজেন দিয়ে প্রাণে বাঁচান।”
রায়গঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক কৌশিক করোনা শুরু হওয়ার পর সাতটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছেন। রায়গঞ্জের কোথাও কোনও বাসিন্দা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন বলে খবর পেলেই তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন। কৌশিক বলেন, “বিনা খরচে শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেনের পরিষেবা দিচ্ছি।”
শুধু কৌশিকই নন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রায়গঞ্জের আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে রায়গঞ্জের উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা সৈকত চক্রবর্তী গত প্রায় একমাস ধরে রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিমিটারের সাহায্যে তাঁদের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ মাপার কাজ করছেন। কারও শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকলে তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তির ব্যবস্থা করছেন তিনি।
অন্য দিকে, রায়গঞ্জ শহরের বীরনগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক মৃণাল সিংহ গত প্রায় একমাস ধরে নিয়মিত করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে নিয়মিত চাল, ডাল, আনাজ ও ডিম পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারও দান করেছেন। শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূল প্রভাবিত অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠনের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি প্রশান্ত মল্লিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল চত্বরে কন্ট্রোলরুম চালু করেছেন। করোনা আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গ থাকা বাসিন্দারা ওই কন্ট্রোলরুমে ফোন করে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ পাচ্ছেন। সৈকত, মৃণাল ও প্রশান্ত বলেন, “সমাজের সর্বস্তরের মানুষের লড়াই ছাড়া করোনাকে হটানো সম্ভব নয়।”