Advertisement
E-Paper

ছোট শিল্পে আঁধারই রয়ে গেল

নোটবন্দি থেকে আর্থিক ঝিমুনি, সব সামলে যে ছোট আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখনও লড়াই চালাচ্ছেন, করোনার ধাক্কায় তাঁদের অধিকাংশেরই মাথায় হাত।

কৌশিক চৌধুরী 

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩১
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শহর শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ায় চানাচুরের কারখানা আছে নৃপেণ ভৌমিকের। ছ’জন কর্মীও আছেন সেখানে। প্রায় ২৫ দিন ধরে কাঁচামালের অভাব, কর্মীদের বাড়ি থেকে আসা-যাওয়ার সমস্যায় কারখানা বন্ধ। পয়লা তারিখে কর্মীদের বেতন, মজুরি মেটালেও আগামী মাসে তা দিতে পারবেন কি না, জানেন না এই ছোট ব্যবসায়ী।

ষাট ছুঁই ছুঁই এই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘বেতন, মজুরি, বিদ্যুতের বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ রয়েছে। নিজের সংসার কী ভাবে চালাব, জানি না। ছেলেমেয়ে বাইরে থেকে পড়াশুনো করে। জমানো টাকায় আর ক’দিন চলবে!’’

নোটবন্দি থেকে আর্থিক ঝিমুনি, সব সামলে যে ছোট আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখনও লড়াই চালাচ্ছেন, করোনার ধাক্কায় তাঁদের অধিকাংশেরই মাথায় হাত। গত কয়েক বছরে ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। এবার করোনা এসে পথে বসিয়ে দিল, বলছেন তাঁরা। অর্থনৈতিক ভাবে দেশ কী করে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই দিশা কেউ দেখাচ্ছেন না, এই অনুযোগও রয়েছে তাঁদের।

নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিসেশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘আমাদের দেশের অর্থনীতির ভিত্তিই ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। উত্তরবঙ্গের লক্ষাধিক মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু গত এক বছরে মন্দা এবং এখন লকডাউনের পর পথের দিশা কোথায়, তা আমরাই জানি না।’’

গত বছরের ইদ, পুজো, বড়দিনের পরে এবারে চৈত্র সেলের বাজার, মন্দার ধারা সর্বত্র। পুজোর বাজারকেও ছাপিয়ে যায় চৈত্র সেলে কাপড়ের ব্যবসা। নববর্ষের হালখাতার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীদের সারা বছরের বকেয়া টাকাও ঘরে আসে। লকডাউনের জেরে চৈত্র সেল শূন্য। সঙ্গে বকেয়া আদায়ও অনিশ্চয়তায়। কোচবিহার থেকে মালদহ, সর্বত্র ছবিটা এক।

গত বছর দুর্গাপুজোর বাজারের সময়েই মন্দার আঁচ মেলে। এ বছর ব্যবসা কিছুটা বাড়বে, এমন আশায় ছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু ২০১৯-২০ আর্থিক বছর শেষ হওয়ার মুখে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হতেই সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উত্তরের আট জেলার ক্ষতির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি টাকা, বলছে বণিক সংগঠনগুলি। সিআইআই-র উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জিৎ সাহা বলেছেন, ‘‘আগামীতে ছোট, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাটাই আমাদের কাছে বড় লড়াই।’’

কৃষিকাজ, চা বাগানের উপরে নির্ভরশীল উত্তরের জেলাগুলির বড় অংশ। চায়ের বটলিফ প্লান্টগুলি তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জুট মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, প্লাস্টিক, পাইপ, তেলের মিল, সয়াবিন, রাসায়নিক, পানীয় জল বোতলজাত করা, অ্যালুমিনিয়াম কারখানা। আছে বিভিন্ন দোকান বা বিপণি। সব ক্ষেত্রেই লোকসানের বহর বেড়েছে।

বণিকমহল বলছে, আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সিমেন্ট, রড, ইটের ব্যবসা মার খাচ্ছে। মোটরবাইক ও বিভিন্ন চার চাকার গাড়ির ব্যবসাও মার খেয়েছে। মার খেয়েছে মালদহের আমের ব্যবসাও। স্বর্ণ শিল্পে বাণিজ্য কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

কয়েক জন ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘কিছু ব্যবসা চালু থাকলেও চাল, আটা, ডাল, ময়দা, ভোজ্যতেল ও বিভিন্ন মুদি সামগ্রীর পাইকারি ব্যবসা গত এক বছরে ভাল হয়নি। সবারই বাজারে টাকা আটকে রয়েছে।’’

তাই আগামীতে কী হবে, সেই উৎকণ্ঠাই তাঁদের আলোচনায়।

তথ্য সহায়তা- পার্থ চক্রবর্তী, গৌর আচার্য।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy