Advertisement
E-Paper

পুলিশ-অপরাধী যোগ, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী

জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রাজ্য সড়ক। সমাজবিরোধীরা রাস্তার উপরেই পণ্য বোঝাই ট্রাক থামিয়ে বেআইনি ভাবে তোলা আদায় করছে বলে অভিযোগ। তাতে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৫
এমন কুপন কেটেই তোলা আদায় হয় বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

এমন কুপন কেটেই তোলা আদায় হয় বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রাজ্য সড়ক। সমাজবিরোধীরা রাস্তার উপরেই পণ্য বোঝাই ট্রাক থামিয়ে বেআইনি ভাবে তোলা আদায় করছে বলে অভিযোগ। তাতে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।

তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য রুখতে মুর্শিদাবাদ এবং ঝাড়খন্ডের পাকুরের ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তরফ থেকে জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাকুরের ট্রাক মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক সামসুর শেখ বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত সমস্ত এলাকাতে আমাদের কাছ থেকে তোলা নেয় দুষ্কৃতীরা। তবে মালদহ জেলাতে তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য সব থেকে বেশি। পুলিশের নাম করে আমাদের কাছ থেকে তোলা আদায় করেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তোলাবাজিতে পুলিশেরও একাংশের মদত রয়েছে। যার জন্য আমাদের লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ জেলা পুলিশ এবং প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না। তাই আমরা জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসককের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছি।’’

একই অভিযোগ করেছেন মুর্শিদাবাদের অন্তর্দীপা ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আজফারুল শেখও। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাবে তোলাবাজি চলতে থাকলে গাড়ির ব্যবসা উঠে যাবে। পণ্য বহন করে আমাদের যা আয় হয়, তার অর্ধেক তোলা দিতেই চলে যায়। তোলা না দিলে আমাদের কর্মীদের দুষ্কৃতীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পুলিশ ও তোলাবাজদের যোগসাজশ থাকায় দুষ্কৃতীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছ।’’ এই বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

ট্রাক মালিকদের সংগঠনগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগেও তোলাবাজির দাপট ছিল মালদহের কয়েকটি মাত্র থানা এলাকায়। পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় সমাজবিরোধীরা এখন মালদহের সব থানা এলাকা জুড়ে তোলাবাজি চালাচ্ছে। প্রসঙ্গত, বৈষ্ণবনগর থানার ভাঙাটোলা মোড় থেকে ১৭ মাইল, কালিয়াচক থানার চৌরঙ্গি মোড় থেকে সুজাপুর, ইংরেজবাজার থানার সুস্থানি মোড়, পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি রেল গেট, গাজলের কদু বাড়ি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এই সব স্থানগুলিতে রাস্তার উপরে ট্রাক থামিয়ে তোলা আদায় হয়। সেই সঙ্গে মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কের হবিবপুর থানার মধ্যম কেন্দুয়া স্টেশন এবং বামনগোলা পাকুয়া এলাকা থেকেও দুষ্কৃতীরা তোলা আদায় করে। অভিযোগ, পুলিশের মদতে প্রকাশ্যেই গাড়ি থামিয়ে চলে তোলাবাজি। আর টাকা না দিলে চালকদের মারধর করা হয়। একেকটি এলাকায় মাসে ২৪ হাজার টাকা করে তোলা দিতে হয় ট্রাক মালিকদের। মাসে তোলা দেওয়ার জন্য দুষ্কৃতীদের কাছে টিকিট কাটতে হয়। অনেক টিকিটে আবার থানার সিল মারা থাকে বলেও অভিযোগ। প্রতি মাসেই টিকিট কাটতে হবে।

মালদহ ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘জেলাতে গাড়ি থামিয়ে তোলা আদায়ের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোন সুরাহা হয়নি। এমন চলতে থাকলে জেলার ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাবেন।’’ ট্রাক সংগঠনগুলির একাংশের দাবি, ওভার লোডের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তোলা আদায় করা হচ্ছে। গাড়ির ওভারলোড দেখার দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের।’’

মালদহের জেলাশাসক তথা জেলা পরিবহণ দফতরের চেয়ারম্যান শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। এই বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘তোলাবাজির ঘটনা কখনও বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ ও প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

(চলবে)

Corruption police National Highway Malda sujapur englishbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy