কোনও স্কুলের ক্লাস ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও দেওয়ালে ফাটলের জেরে আতঙ্কে আবাসিকেরা। শহরের পুরনো বাড়িগুলির হাল খতিয়ে দেখার দাবিও উঠেছে। অথচ পুরসভার কর্মীদের দেখা মিলছে না।
ভূমিকম্পের এক দিন পরেও কোচবিহার পুরসভা কোনও বিষয় নিয়ে তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, পুরসভা কার্যত এখন চেয়ারম্যানহীন। বিদায়ী চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য নাম কা ওয়াস্তে কখনও কখনও অফিসে যান। স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ারম্যানহীন পুরসভার পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের আতঙ্ক যখন মানুষের মধ্যে চেপে বসেছে, তখন গোটা শহরে পুরসভার কোনও ভূমিকা নেই। এমনকী যে বিল্ডিংগুলিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা পরিদর্শনেও যাননি পুরসভার কোনও বাস্তুকার বা কর্তা।
কোচবিহার পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি কাজ অনুসারে পুরসভায় যাই। ভূমিকম্পের সময়ও অফিসে ছিলাম। আমাদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর আসেনি।” পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা তথা এ বার সিপিএমের জয়ী প্রার্থী মহানন্দ সাহা অভিযোগ করেন, পুরসভা চেয়ারম্যানহীন রয়েছে। ফলে শহরের মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও থমকে গিয়েছে। তিনি বলেন, “ভূমিকম্পের পরে পুরসভার কিছু কাজ থাকে। শহরের পুরনো বাড়িগুলির কী অবস্থা? যেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেই বিল্ডিংয়ের অবস্থা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করা। পুরসভার চেয়ারম্যান না থাকায় কিছু হচ্ছে না।”
মঙ্গলবার ভুমিকম্পে কেঁপে ওঠে কোচবিহার। কম্পনের জেরে শহরের বেশ কয়েকটি বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দেয়। কোচবিহার জেনকিন্স হাইস্কুলে দোতলার দু’টি ক্লাস ঘরের কিছু খসে পড়ে। একটি ক্লাস ঘরের সামনের খুঁটির কিছু অংশ ভেঙে যায়। এ দিন ওই ঘরগুলি খতিয়ে দেখে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন পূর্ত দফতরের বাস্তুকারেরা। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ঘরগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছি। আপাতত ক্লাস ঘরগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। ছাত্রদের অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” কোচবিহার জেলা হাসপাতালের (এমজেন) অপারেশন থিয়েটারের কিছু অংশ খসে পড়েছে। হাসপাতালের নার্সিং হস্টেলের বিল্ডিংয়েও ফাটল দেখা দিয়েছে। দু’টি বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়েছি। তাঁরা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” অপারেশন থিয়েটার অবশ্য বন্ধ রাখা হয়নি। নার্সিং হস্টেলেও আবাসিক রয়েছেন। আবাসিকদের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। কোনও ক্ষেত্রেই অবশ্য পুরসভার কারও দেখা মেলেনি। কোচবিহার শহরে শুধু রাজবাড়ি নয়, রাজাদের সময়কার বেশ কিছু পুরনো বাড়ি রয়েছে। এক একটি ভবনের বয়স একশো বছরেরও বেশি। বাসিন্দাদের অনেকে দাবি করেন, বার বার যখন ভূমিকম্পের রেশ কোচবিহারেও পড়ছে। সে ক্ষেত্রে পুরনো বাড়ির কী অবস্থা, তা দেখা দরকার ছিল পুরসভার। এক কাউন্সিলর কটাক্ষ করে বলেন, “পরিষেবাই দিতে পারছে না পুরসভা। সেখানে ভূমিকম্প নিয়ে কী করবে?”
পুরসভা ভোটের সময় থেকে কার্যত চেয়ারম্যান বিহীন রয়েছে পুরসভা। কোচবিহারের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা জানান, আগামী ২২ মে কোচবিহার পুরসভার নতুন বোর্ড গঠন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy