সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোর্ডিং। — নিজস্ব চিত্র
পাট, ভুট্টার মতো বড় গাছ থাকলে নজরদারির সমস্যা হয়। তাই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় এমন ফসল চাষে বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এতদিন ধান গম চাষ করতেন কৃষকরা। এ বার সেই গম চাষেও নিষেধাজ্ঞা জারি করল প্রশাসন।
মালদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হোর্ডিং লাগিয়ে কৃষি দফতরের পক্ষে প্রচার করা হয়েছে যে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও গম চাষ করা যাবে না। দফতরের আধিকারিকরা সীমান্তের গ্রামে গ্রামে গিয়ে গম চাষিদের সে কথা বোঝাচ্ছেনও। আর এই নিষেধাজ্ঞায় মালদহের সীমান্তের গম চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।
তাঁদের অভিযোগ, একেই নোট বাতিলের জেরে হাতে খুচরো টাকা নেই। শ্রমিকদের টাকায় মজুরি দিতে না পারায় ধানের বিনিময়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। গম চাষের জন্য ধারদেনা করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি নিড়ানো হয়েছে। গমের বীজ বোনার মুখে বলা হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত জমিতে গম চাষ করা যাবে না। কালিয়াচক ৩ ব্লকের শ্মশানি গ্রামের গম চাষি নাসিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘কাঁটাতারের বেড়ার এপারেই আমার পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে. এবার ধান চাষ করেছিলাম. কিন্তু নোট বদলের গেরোয় হাতে খুচরো টাকা না থাকায় অনেকদিন ধান কাটতে পারিনি। তারপর গম চাষের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন শেষ মূহূর্তে কোথায় যাব?’’
কিন্তু সীমান্তে গম চাষে কেন এই নিষেধাজ্ঞা? কী বলছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরা? মালদহ জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) বাপামোহন রাজা রেড্ডি বলেন, ‘‘গত বছর বাংলাদেশে লক্ষাধিক বিঘা জমির ধান ঝলসা রোগে নষ্ট হয়েছে। মালদহ যেহেতু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা সে কারণে ওই রোগ এই জেলাতেও চলে আসতে পারে। ওই রোগে আক্রান্ত গম খেত পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কোনও প্রতিকার নেই। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নির্দেশেই বাংলাদেশের সীমানার কাঁটাতারের বেড়া থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ করা যাবে না।’’
তা ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে আসা গমের বীজ যেন ব্যবহার না করা হয়, তাই দফতরের তরফ থেকে বিকল্প চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশে ক্ষুব্ধ সিপিএমের কৃষক সংগঠনের মালদহ জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারির জন্য মালদহ জেলার ১৭০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাট ও ভুট্টা চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই এখন সীমান্তের চাষিদের প্রধান অর্থকরী ফসলই গম। সেটাও যদি বন্ধ করা হয় তবে চাষিরা যাবে কোথায়?’’ তাঁর যুক্তি, তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া যায় যে বাংলাদেশে গম চাষে গত বছর ঝলসা রোগ মহামারীর আকার নিয়েছিল, তবে এই রোগ প্রতিরোধে কৃষি দফতর সচেতন হয়নি কেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy