সকাল থেকে সীমান্তের পাশের মানি এক্সচেঞ্জ বা টাকা বদলের কাউন্টারগুলি বাংলাদেশি মানুষের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মত। এ পারে কেউ এলে ব্যবসার সঙ্গে যুবকেরা ঘিরে ধরে বাংলাদেশি টাকা ভারতের টাকায় বদল করার হিসাব বলে নিজেদের কাউন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। ভিড় লেগেই থাকত বিভিন্ন টাকা বদলের কাউন্টারে।
কিন্তু ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে বদল হয়েছে ছবিটা। ভারতে আসার জন্য চিকিৎসা বা পড়াশোনোর ভিসা ছাড়া কিছু মিলছে না। তাও আসছেন হাতেগোনা লোকজন। এতেই শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট এলাকার টাকা বদলের সংস্থার দফতরগুলি প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
ফুলবাড়ি ট্রাভেলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা টাকা বদলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জানিয়েছেন, কমবেশি শতাধিক ছেলে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব ধরনের ভিসা চালু থাকার সময় প্রত্যেকদিন ২৫-৩০ কোটি টাকা বদল হত। কিন্তু গত প্রায় দুই মাস ধরে ভারত চিকিৎসা এবং পড়াশোনা বাদে বাকি সমস্ত ভিসা বন্ধ করেছে। যে কয়েকজন এ পারে আসছেন তাতে টাকা বদল কম হচ্ছে। এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কাউন্টার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘নতুন করে কোনও ব্যবসা চালু করা যায় কি না, চিন্তা করছি।’’
সংগঠনের সম্পাদক প্রশান্ত কুমার বসু বলেন, ‘‘শতাধিক ছেলের জীবিকা সঙ্কটে। সেই সঙ্গে স্থলবন্দরের দোকানপাট এবং অন্য ব্যবসাও ধুঁকছে। কী করব বোঝা যাচ্ছে না।’’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই সীমান্ত বিএসএফের নজরদারি আরও বেড়েছে। অনুপ্রবেশের চেষ্টা-সহ সীমান্তে নানা ঘটনা সামনে এসেছে। এতেই কেন্দ্রীয় সরকার ভিসা দেওয়ায় সতর্ক বিধি চালু করে। অপারেশন সিঁদুরের পরে বাংলাদেশ থেকে পানীয়, সুতি পোশাক, প্লাস্টিক জাতীয় সামগ্রীর আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয় ফুলবাড়ি এবং চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে। এলাকার ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ভারতের পাথর বোল্ডার বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে যাচ্ছে না। তাতেও প্রত্যেকদিন কয়েক কোটির ব্যবসায় ঘাটতি হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
ফুলবাড়ির শুল্ক দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘স্বাভাবিক সময়ে ৩০০ বেশি মানুষের পারাপার করতেন। বর্তমানে হাতেগোনা ২৫-৩০ জন সীমান্ত পারাপার করছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)