‘এই ২ হাজার-২’হাজার... মাত্র ২ হাজার।’ দোকানদারের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে ঘুরে তাকাচ্ছেন হাটে আসা লোকজন। চলছে দারদাম। তার পর কেউ কেউ নীল রঙের সাইকেল কিনছেন ১৮০০ টাকায়। কেউ আরও কম দামে সাইকেল না-পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই ভাবে খোলাহাটে বিক্রি হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল। যা নিয়ে শোরগোল দক্ষিণ দিনাজপুরে। তৃণমূল তথা প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করছে বিরোধীরা। উঠছে পাল্টা অভিযোগ।
যাতায়াতের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার বিনামূল্যে সাইকেল দেয় স্কুলপড়ুয়াদের। প্রকল্পের নাম ‘সবুজ সাথী’। সরকারি লোগো লাগানো নীল রঙের সেই সাইকেল কিনা বিক্রি হচ্ছে হাটে! দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভার অদূরে শিববাড়ির হাট। সেখানে ‘সবুজ সাথী’র সাইকেলের দাম পড়ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। ‘সরকারি’ সাইকেলের পসার সাজিয়ে ক্রেতাদের উদ্দেশে হাঁক পাড়ছেন দোকানদারেরা। বিক্রিও হচ্ছে ভাল। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভা থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ওই হাটে গত কয়েক দিন ধরে ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের হুঁশ নেই সে দিকে।
প্রতি সপ্তাহের রবিবার গঙ্গারামপুরের শিববাড়িতে হাট বসে। গত রবিবার সেই হাটে দেখা যায় লম্বা লাইনে দাঁড় করানোর ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল। সেগুলি বিক্রিও হচ্ছে। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের সাইকেল কী ভাবে আপনাদের হাতে এল? কী ভাবেই বা সে সব হাটে বিক্রি করছেন? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রী ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল ব্যবহার করছে। কারণ, সাইকেলের গুণমান নাকি খারাপ। তারা অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন সাইকেল দোকানে। সেখান থেকে সাইকেলগুলোকে সারিয়ে ‘দালাল’ মারফত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে হাটে। তার পর এই বিক্রিবাটা।
আরও পড়ুন:
তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অম্বরীশ সরকারের বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে, তা বাঞ্ছনীয় নয়। যদি সত্যিই এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে, প্রশাসনের উচিত পদক্ষেপ করা। পাশাপাশি কোন পথ ধরে সাইকেল হাটে আসছে, সেটাও খুঁজে বার করা দরকার।’’ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি প্রশাসনের কেউ। অন্য দিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘যারা প্রকৃত ছাত্র, তাদের হাতে সাইকেল পৌঁছোয় না। পিছনের দরজা দিয়ে তৃণমূল নেতাদের হাত ধরেই ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের করের টাকায় কেনা জিনিসের এ ভাবেই অপব্যবহার হচ্ছে। এর জবাব দিতে হবে প্রশাসনকেই।’’