Advertisement
২৬ মে ২০২৪

হাতি আটকাতে তারে বিদ্যুৎ, মৃত্যু শ্রমিকের

হাতির হানা আটকানোর জন্য ধানের খেতে বেআইনি ভাবে পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। সোমবার সকালে জলপাইগুড়ির মান্তাদাড়ি এলাকায় এই ঘটনায় পুলিশ ও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বন দফতর। তাঁদের গাফিলতিতেই গ্রামবাসীরা বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে রাখে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

হাতির হানা আটকানোর জন্য ধানের খেতে বেআইনি ভাবে পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। সোমবার সকালে জলপাইগুড়ির মান্তাদাড়ি এলাকায় এই ঘটনায় পুলিশ ও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বন দফতর। তাঁদের গাফিলতিতেই গ্রামবাসীরা বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে রাখে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিশু ওঁরাও (৫০)। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ির নাথুয়াচর এলাকায়। এ দিন ধান কাটার কাজ করতেই মান্তাদাড়ি এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই জঙ্গলের মধ্যে বিছিয়ে রাখা তারে পা লেগে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আরও এক জন একই ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেও তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। ঘটনার পরেই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর একাংশ স্থানীয় এক জনকে চিহ্নিত করে। অবশ্য অভিযুক্ত পালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় মিলনপল্লি ফাঁড়ির পুলিশ তার বিছিয়ে রাখার ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি বলে দাবি করেছে।

তবে শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, কারা তার বিছিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কথা বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির সঙ্গেও। কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে জানান তিনি। মৃতের বাড়ির তরফ থেকে কোনও অভিযোগ হলে বা দেহটি ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা গেলে সেই অনুযায়ী তদন্ত করা হবে।

বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত অভিযোগ করেন, ‘‘এমন ভাবে রাতে বিভিন্ন বাড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুক করে নিয়ে চাষের খেতে ছড়িয়ে রাখে। তাতে মানুষের প্রাণহানি তো ঘটছেই সেই সঙ্গে হাতি, লেপার্ড বা হরিণও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারে।’’ একাধিক বার, পুলিশ, বিদ্যুৎ কোম্পানি, বিধায়ককে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। কিন্তু তার পরেও কোনও লাভ হয়নি। ওই গ্রামের সীমানা বরাবর বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল। ফলে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ার ঘটনা হামেশাই ঘটছে বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এলাকার বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে বনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাব।’’

তবে তাঁকে আগে কেউ এ বিষয়ে জানাননি বলে দাবি করেন তিনি। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মণ্ডলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

তবে সিনিয়র ম্যানেজার সাধন মণ্ডল বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ অনেক জায়গা থেকে আসে। ওই এলাকায় কী হয়েছে তা ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে খোঁজ নেব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীর চর দখল করে বিঘার পর বিঘা চাষ করে কিছু লোক। ধান পাকার সময় বেআইনি ভাবে বিদ্যুতের তার বিছিয়ে রাখে খেতে। এই ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এর আগেও কয়েক জন এই এলাকায় মারা গিয়েছেন। তার পরেও পুলিশ, প্রশাসনের টনক নড়েনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE