Advertisement
E-Paper

স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির দাবি ক্রীড়াপ্রেমীদের

পরিকাঠামো ও উৎসাহের অভাবে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে মালদহের যুবক-যুবতীরা। এমনই অভিযোগ করেছেন ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকে। ক্রীড়াপ্রেমী ক্লাবগুলির কর্তারা অনেকেই জানান, তাঁদের উৎসাহিত করতে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ, মাঠ সংস্কার এবং ছোট ছোট টুর্নামেন্ট নিয়মিত করতে হবে।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০২:০০
ঘাস উঠে যাওয়া এই মাঠেই চলে প্র্যাকটিস। —নিজস্ব চিত্র।

ঘাস উঠে যাওয়া এই মাঠেই চলে প্র্যাকটিস। —নিজস্ব চিত্র।

পরিকাঠামো ও উৎসাহের অভাবে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে মালদহের যুবক-যুবতীরা। এমনই অভিযোগ করেছেন ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকে। ক্রীড়াপ্রেমী ক্লাবগুলির কর্তারা অনেকেই জানান, তাঁদের উৎসাহিত করতে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ, মাঠ সংস্কার এবং ছোট ছোট টুর্নামেন্ট নিয়মিত করতে হবে। তাঁদের দাবি, খেলার পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের খেলার পরিবেশ দিতে হবে। তাঁদের কথায়, খেলোয়াড়েরা যত বেশি খেলার সুযোগ পাবে, তত বেশি খেলার প্রতি উৎসাহ বাড়বে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পাশাপাশি ক্রীড়াপ্রেমীদের আসরে নামতে হবে। খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে।

ইংরেজবাজারের সত্য চৌধুরী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর অভাব থাকায় টেবিলটেনিস ছাড়া আর কিছু খেলা হয় না। তাই পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি উঠেছে। এখানে আধুনিক মানের জিমখানা, খেলোয়াড়দের বিশ্রামের ব্যবস্থা, মেঝেতে রাবার ম্যাট বসানো, ভাল ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ ইন্ডোর স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ করতে হবে।

সারা জেলাতে মাত্র একটি ইন্ডোর স্টেডিয়াম রয়েছে। ২০০৯ সালে ২২ ডিসেম্বর ওই স্টেডিয়াম তৈরি হয়। আরও একটি স্টেডিয়াম রয়েছে। তবে সেটি রেলের। ১৯৮২ সালে এবিএ গনি খান চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হোসেন সাহু নামে একটি ইন্ডোর স্টেডিয়াম গড়ে তুলেছেন। এই স্টেডিয়ামটি অবশ্য শুধু মাত্র রেলের কর্মীরাই ব্যবহার করতে পারেন। অন্য কেউ ব্যবহার করতে চাইলে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। তাই সত্য চৌধুরী ইন্ডোর স্টেডিয়ামই ভরসা সাধারণের। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোও উন্নত নয়। টিনের শেড হওয়ায় প্রচন্ড গরম। বৃষ্টি হলেই স্টেডিয়ামের ছাদ দিয়ে জল পড়ে। দর্শকদের বসার সিটগুলি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। খেলোয়াড় এবং দর্শকদের জন্য কোন শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।

ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংস্কারের পাশাপাশি স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির দাবিও উঠেছে। সেখাবে ৪০০ মিটারের ট্র্যাক করতে হবে। কবাডি, খো খো, লং-জাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্রিকেটের জন্য পৃথক মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, ক্রিকেট খেলার আলাদা মাঠ না থাকলে এখানে বড়ো কোনও টুর্নামেন্ট হয় না।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে কেবল জেলা ক্রিকেট লিগই হয়। তবে মালদহ ও দুই দিনাজপুর নিয়ে জোন লিগ হয় না। প্রধান কারণ হল মাঠ। খেলার পিচ সারা বছর সংস্কার না হওয়ার ফলে ক্রিকেটারদের সমস্যা হয়। এ ছাড়া, এখানে মাঠের অভাবে রঞ্জি ট্রফির খেলাও দেওয়া হয় না।

ইংরেজবাজারের বৃন্দাবনী মাঠের গ্যালারি ঝাঁ চকচকে করা হলেও মাঠটির হাল ফেরানো হয়নি। মাঠে সমান ভাবে মাটি ফেলে ঘাস বুনতে হবে। জেলার ক্রীড়া সংস্থার সদস্য শান্তনু সাহা বলেন, ‘‘খেলাধুলোর পরিবেশ ফিরছে মালদহে। শুনেছি, ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে। তা হলে খেলোয়ারদের সুবিধে হবে। এ ছাড়া রেলের যে ইন্ডোর স্টেডিয়াম রয়েছে, সেই স্টেডিয়ামটি রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের ব্যবহার করতে দিলে খুবই ভাল হয়।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্য ক্রীড়া দফতর স্টেডিয়ামটি সংস্কারের জন্য ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আধুনিক রূপে স্টেডিয়ামটি গড়ে তোলা হবে। ফলে ছেলেমেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।’’

মালদহে লিগ ক্রিকেট, লিগ ফুটবল ছাড়া তেমন কোনও টুর্নামেন্ট হয় না বলে অভিযোগ বিভিন্ন ক্লাব কর্তাদের। তাঁরা দাবি তুলেছেন, জুনিয়রদের নিয়ে বিভিন্ন খেলা ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ভলিবলে মতো টুর্নামেন্ট করতে হবে। সেই সব টুর্নামেন্টগুলি ছেলেদের মতো মেয়েদেরও জন্য রাখতে হবে। জেলার ক্রীড়া সংস্থার অসুবিধে হলে বিভিন্ন ক্লাবগুলিকে এক এক করে টুর্নামেন্ট চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক।

শান্তি ভারতী পরিষদের সম্পাদক গৌতম বসু বলেন, ‘‘ফুটবল, ক্রিকেট খেলায় আমাদের ক্লাব প্রায়ই সেরা হয়। কিন্তু আমাদের শুধু লিগের আশায় থাকতে হয়। লিগ ছাড়াও বিভিন্ন টুর্নামেন্ট করা হলে খেলাধুলোর প্রতি আরও আগ্রহ বাড়বে সবার। এ ছাড়া আমাদের ক্লাবের মাঠে আগে মহিলা ও পুরুষদের জন্য কবাডি, খো খো, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন সহ নানা খেলা হতো। মাঠের অভাবে তা হচ্ছে না। জেলা ক্রীড়া সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা সেই খেলাগুলি চালিয়ে যেতে পারি।’’

জুনিয়রদের খেলার সুযোগ এবং তাদের প্রশিক্ষণের দাবি তুলেছেন হোয়াইট ইলেভেন ক্লাবের সম্পাদক কৌশিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘জুনিয়রদের সুযোগ দেওয়ার জন্য টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যত খেলবে, তত সুযোগ পাবে। এখানে প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। ভাল মতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অভিভাবকদের ছেলেমেয়েদেরকে পড়াশোনায় উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি মাঠমুখীও করতে হবে। এখন গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে টিম করতে হচ্ছে আমাদের। কারণ, শহরের ছেলেমেয়েদের পাওয়া যাচ্ছে না।’’

প্রাক্তন খেলোয়ার দীপ্তিমান সেন বলেন, ‘‘আগে পরিকাঠামো না থাকলেও খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল আমাদের। এখন পরিকাঠামোর পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ কমছে। তাদের আগ্রহ বাড়াতে আরও উদ্যোগী হতে হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘খেলাধুলোয় উৎসাহ বাড়াতে আমাদের সরকার তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন ক্লাবকে অনুদানও দেওয়া হচ্ছে। বৃন্দাবনী মাঠের চেহারা বদলে দেওয়া হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’

Abhijeet Saha Malda sport complex englishbazar cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy