Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সারা দিন দেব-জ্বরে শিলিগুড়ি

কথা ছিল হুডখোলা জিপে ওঠার। কিন্তু স্লেট রঙের এসইউভি থামতেই চারদিক থেকে ভিড় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ভিড়ের ধাক্কায় ছিটকে গিয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা। গাড়ির দরজা, জানালা, বনেটে আছড়ে পড়ছে একের পর এক হাতের ধাক্কা। ভিড়ের দাবি, একবার গাড়ি থেকে নামতে হবে তাঁকে। গাড়ির সামনে বসে পড়ছে ভক্তরা। পুলিশের ম্যানপ্যাকে খবর গেল কন্ট্রোল রুমে।

শিলিগুড়িতে দেবকে দেখে উন্মাদনা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়িতে দেবকে দেখে উন্মাদনা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

কথা ছিল হুডখোলা জিপে ওঠার। কিন্তু স্লেট রঙের এসইউভি থামতেই চারদিক থেকে ভিড় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ভিড়ের ধাক্কায় ছিটকে গিয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা। গাড়ির দরজা, জানালা, বনেটে আছড়ে পড়ছে একের পর এক হাতের ধাক্কা। ভিড়ের দাবি, একবার গাড়ি থেকে নামতে হবে তাঁকে। গাড়ির সামনে বসে পড়ছে ভক্তরা। পুলিশের ম্যানপ্যাকে খবর গেল কন্ট্রোল রুমে। পুলিশের আশঙ্কা, অন্তত হাজার খানেক ভক্তদের ভিড়ে তিনি ছিনতাই হয়ে যেতে পারেন। তাই, কোনও ভাবেই তাঁকে হুডখোলা জিপে তোলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগী হলেন স্বয়ং তিনি। গাড়ির দরজা সামান্য ফাঁক করে, জানালায় হাত রেখে উঁচু হয়ে মুখ বের করলেন সাংসদ দীপক অধিকারী। নীল গেঞ্জি, কালো রোদ চশমা। একহাত তুলে অভিবাদন জানালেন। ভিড়ের গর্জনে কান দিলে শোনা যাচ্ছে একটাই ডাক ‘দেব-দেব-দেব।’

কোনক্রমে নিরাপত্তা কর্মীরা ভিড় ঠেলে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। মাত্র ১০০ মিটার পার হতে লেগে গেল আধঘণ্টা। গাড়ি চলে যাওয়ার পরে দেখা গেল রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ছেড়া চটি, হাওয়াই। শিলিগুড়ির পাতিকলোনি মোড়, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা। শুরু হল দেবের রোড শো। শুরু হল শিলিগুড়িতে দেব-উন্মাদনা। দুপুর থেকে যা চলল রাত পর্যন্ত।

আগাগোড়া এসইউভি গাড়ির ভিতরেই দেবকে রাখা হয়। বেশিরভাগ সময়েই জানালার কালো কাচ তোলা ছিল। কালো কাচের ভিতর দিয়েই নায়ককে দেখতে উন্মাদনাও ছিল তুঙ্গে। দেবও গাড়ির ভিতরে বসে সমানে হাত নেড়ে গিয়েছেন, কখনও জোড় হাতে নমস্কার জানিয়েছেন। অলি-গলি ছেড়ে হিলকার্ট রোড বা বর্ধমান রোড দিয়ে তির বেগে গাড়ি ছুটেছে, তখনও ভক্ত যুবকদের কয়েক জন ট্র্যাফিকের পরোয়া না করে গাড়ির পাশে বাইক চালিয়েছেন। সব বাইকেই চালক ছাড়াও ছিলেন এক বা দু’জন আরোহী। চলন্ত বাইক থেকেই মোবাইলে নায়কের ছবিও তুলেছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের উন্মাদনা দেখে, ‘দেব হিস্টিরিয়া’ বলে মন্তব্য করছেন এক অভিজ্ঞ পুলিশ কর্তা।

পাতিকলোনির মোড় ছেড়ে হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোড, চানাপট্টি, ডাঙ্গিপাড়া, টিউমল পাড়া, বর্ধমান রোড, নিবেদিতা রোড, চমম্পাসারি মোড় যেখানেই দেবের গাড়ি পৌঁছেছে, সেখানেই গাড়ি ছেকে ধরেছে ভক্তদের ভিড়। টিউমল পাড়া বা নিবেদিতা রোড, বাঘাযতীন কলোনিতে দেবের গাড়ি যখন পৌঁছেছে রাস্তা জুড়ে শুধু কালো মাথা দেখা গিয়েছে। গাড়ি চলে যাওয়ার পরে পাতিকলোনির মতো সব রাস্তাতেই ছেঁড়া চটি ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ভিড়ের ঠেলায় কারও চটি ছিঁড়ে রাস্তায় লুটিয়েছে, কেউ বা নিজেই পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছেন অনেকেই। পাতিকলোনির বাসিন্দা গৃহবধূ সুপর্ণা দাস ভিড়ের ধাক্কায় নয়নজুলিতে পড়ে গিয়েছে। উঠে শাড়ি ঝেড়ে আবার এসইউভির দিকে দৌড়েছেন। রাস্তায় পড়ে হাতে ছড়ে গিয়েছে আলপনা মণ্ডলের। যে সব পথে দেবের যাওয়ার কথা ছিল, তার বিভিন্ন মোড়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিল ভক্তদের ভিড়। সেই ভিড়ে কচিকাঁচা থেকে শুরু করে, কপালে বড় করে চন্দনের টিপ আঁকা বৃদ্ধাকেও দেখা গিয়েছে। তাঁদের কেউ নায়কের সঙ্গে হাত মেলাতে চেয়েছেন, কেউ বা অটোগ্রাফ পেতে চেয়েছেন। ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে কেউ রাস্তায়, কেউ বা গাড়ির উপরে খেয়ে পড়েছেন। তবে, অটোগ্রাফের খাতা হাতে এগিয়ে গেলেও, নায়কের সই মেলেনি ভক্তদের। কয়েক জায়গায় ভিড়ে গাড়ি আটকে যাওয়ায় শুধু দরজা সামান্য ফাঁক করে মাথা বের করেছেন তিনি। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ভাগিস্য দেব অটোগ্রাফ দেননি। একবার অটোগ্রাফ বিলোতে শুরু করলে, সারাদিন ভক্তদের হাতে ঘেরাও হয়ে থাকতে হতো।’’

ভিড়ের ধাক্কায় ছিটকে গিয়ে নায়ককে দেখতে পাননি বাঘাযতীন কলোনির এক তরুণী। সে আক্ষেপে রাস্তাতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছেন তিনি। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে স্বান্তনা দিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন। দুপুরে ঘণ্টাদুয়েক রোড শো’র পরে সেবক রোডের একটি হোটেলে বিশ্রাম নিতে ঢুকে পড়েন দেব। একই গাড়িতে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেব। রোড শো শেষে তাঁর মন্তব্য ‘‘যে উন্মাদনা দেখলাম। তাতে বোঝা গেল শিলিগুড়ি দেবকে কতটা ভালবাসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE