শিলিগুড়ি ডিভিশনের কর্মীরা ১০০ শতাংশ বেতন পেলেও এপ্রিল মাসে কোচবিহার ডিভিশনের কর্মীরা ৭৩ শতাংশ বেতন পেয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ওই পরিমাণ আরও কম ছিল। একই ভাবে রায়গঞ্জ, বহরমপুর ডিভিশনের কর্মীরাও পুরো বেতন পাচ্ছেন না। বেতন বন্টনে এই বৈষ্যমের অভিযোগ ঘিরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই কাজ ও দায়িত্ব পালনের পরেও কেন বিভিন্ন ডিভিশনের কর্মীদের সমহারে বেতন দেওয়া হবে না সেই প্রশ্নও উঠেছে।
এই বিষয়ে সরব হয়েছে নিগমের ইনটাক প্রভাবিত এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন। আগামী শুক্রবার ওই ব্যাপারে নিগম কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোর পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “নিগমের সব ডিভিশনে সমান আয় হচ্ছে না বলে সমহারে বেতন দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিলিগুড়ি ডিভিশন কর্মীদের এপ্রিলের বেতনের ১০০ শতাংশই দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জ, বহরমপুর ডিভিশনে পুরো না হলেও ফি মাসে অনেকটাই বেতন মেটানো হচ্ছে। কোচবিহারের ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যার তুলনায় আয় কম হচ্ছে বলে বেশি সমস্যা হচ্ছে। আয় বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের ভর্তুকির টাকা চারটি ডিভিশনে প্রায় সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই নিরিখে সব ডিভিশন বেতন মেটাতে, ফি মাসে গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি টাকা পায়। সংস্থার ডিভিশন্যাল ম্যানেজারদের সঙ্গে বৈঠকে বাকি টাকা নিজস্ব আয় থেকে মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই নিরিখেই বিভিন্ন ডিভিশনে বেতন দেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়ি ডিভিশন জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশন ও রাজ্য সরকারের বরাদ্দে নতুন বাসের সংখ্যা গত কয়েক মাসে ১২১টি বেড়েছে। ওই ডিভিশনের আওতায় বর্তমানে বাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৬টি। তার মধ্যে দৈনিক গড়ে ২৩০টি বাস রাস্তায় নামছে। স্বাভাবিক ভাবে টিকিট বিক্রি বাবদ আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩ কোটি টাকা হয়েছে। নতুন বাসে কিলোমিটার প্রতি তেল খরচ ও যন্ত্রাংশ মেরামতের খরচও কম। স্বাভাবিক ভাবেই ভর্তুকির বরাদ্দ পাওয়ার পর এক হাজারের বেশি কর্মীর পুরো বেতন মেটানোর জন্য বাকি টাকার বন্দোবস্ত করতে সমস্যা হচ্ছে না।
অন্য দিকে, কোচবিহার ডিভিশনের আওতায় বাস চলছে ১৮০টি। তার মধ্যে ১০টি নতুন। বাকি সব পুরনো। তার ওপর প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন রুটে ওই বাস চালাতে গিয়ে কিলোমিটার প্রতি আয় সে ভাবে বাড়ানো যায়নি। ফলে ফি মাসে ওই ডিভিশনে টিকিট বিক্রি বাবদ আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। অথচ কর্মীর সংখ্যা প্রায় সমসংখ্যক, এক হাজারের কিছু বেশি। নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “কোচবিহার ডিভিশনের আওতায় স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৬৭৬। শিলিগুড়িতে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বড়জোর ৫৫০ জন। এছাড়াও পুরনো বাস, অপেক্ষাকৃত অলাভজনক রুট, যন্ত্রাংশের খরচ মিলিয়ে বড় অঙ্কের টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। শিলিগুড়ি ডিভিশন ইচ্ছে মতো সময়সূচি ঠিক করে দূরপাল্লার রুটে বাস চালাচ্ছে। কোচবিহার থেকে দূরপাল্লার রুটের বাসগুলিকে ওই সব বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে।”
নিগমের পরিচালন বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য থেকে কর্মী সংগঠনগুলির অনেকেই অবশ্য ওই সব চুলচেরা বিশ্লেষণ বা যুক্তি কতটা যথাযথ, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। নিগমের ইনটাক অনুমোদিত এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সুজিত সরকার বলেন, “এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না। আমরা ফি মাসে সমস্ত কর্মীর জন্য সমহারে বেতন চাই। সমস্ত ডিভিশনের আয় নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে জমা করে ভর্তুকি যুক্ত করে সকলের মধ্যে সমান ভাবে বন্টন করা হলে কোন ক্ষোভ থাকবে। শুক্রবার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে ওই ব্যাপারে দাবি জানানো হবে।” নিগমের পরিচালন বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “কোন ডিভিশনে কত বাস রয়েছে, কতগুলি রুট লাভজনক, কর্মীর সংখ্যা কত, এ সব বিষয়ের ওপর আয় নির্ভর করে। সে সব না দেখে এক সংস্থায় কাজ করে একেক ডিভিশনের কর্মীদের বেতনে বৈষম্য মানা যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy