পুলিশের আয়োজিত আলোচনা সভা শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ বাড়ছে শিলিগুড়িতে। পুলিশের দেওয়া গত তিন বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে। রবিবার শিলিগুড়ি পুলিশের আয়োজিত ‘অপরাধে’র বিষয়ে একটি সেমিনারে মেয়েদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের প্রবণতা বাড়ার কথা মেনে নিয়েছেন খোদ পুলিশ কমিশনার-ই। বিষয়টি উদ্বেগজনক দাবি করে, মেয়েদের জন্য পৃথক হেল্প-লাইন চালু করা, বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা সহ নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।
এ দিনের সেমিনারে শিলিগুড়ি কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যানের কিছু নমুণা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়। তাতে দেখা যায়, শিলিগুড়িতে চুরির অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। তার থেকেও লাফিয়ে বাড়ছে মেয়েদের উপর শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে শিলিগুড়িতে ধর্ষণ এবং শারীরিক অত্যাচারের ৫৫টি অভিযোগ হয়েছিল কমিশনারেটের বিভিন্ন থানায়। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭২ এবং চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ৩৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২০১২ সালে শিলিগুড়িতে মেয়েদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগের হার ছিল প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ, চলতি বছরে সেই হার বেড়ে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ ছুঁতে চলেছে। গত বছর মেয়েদের উপরের অত্যাচারের মোট অভিযোগ ছিল ৮৮৭টি। অথচ চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই ৪৪৯টি অভিযোগ দায়ের হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যান আমাদের উদ্বেগে রেখেছে। এটা শুধু পুলিশের পক্ষে একা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া উচিত। পাশের বাড়িতে কোনও মহিলাকে অত্যাচারিতা হতে দেখে চুপ করে না থেকে পুলিশে জানান। কোনও সমাজে মেয়েদের কতটা সম্মান করা হয়, তা দিয়েই সমাজ কতটা সভ্য বিচার করা সম্ভব।’’
কেন শিলিগুড়িতে মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রবণতা বাড়ছে?
পুলিশের তরফেই এর একটা ব্যাখ্যা তৈরি করা হয়েছে। এ দিনের সেমিনারে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় মাদকাসক্তি বেড়ে চলার প্রবণতাও দেখানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, ড্রাগ সহ অনান্য মাদকদ্রব চোরাপথে ঢুকে পড়া অপরাধের ঘটনা বাড়াচ্ছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাইয়ের প্রবণতা যেমন বাড়ে তেমনিই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কিছুক্ষেত্রে মহিলাদের উপরেও অত্যাচারের প্রবণতা বাড়ে। পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেখানো হয়েছে, ২০১৩ সালে মাদকাসক্ত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনার হার ছিল ০.৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক শতাংশের অনেক কম। সেখানে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যানে মাদকজনিত কারণে অপরাধের হার ১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
পুলিশের তরফে অবশ্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে। শিলিগুড়ি কমিশনারেট এলাকার জন্য একটি পৃথক হেল্প লাইন তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই হেল্প লাইনে মহিলারা ফোন করে সাহায্য চাইতে পারবেন, অভিযোগ জানাতে পারবেন। মহিলাদের উপরে হওয়া অত্যাচার সংক্রান্ত তথ্যও জানাতে পারবেন। যে তথ্য জানাবে তার নাম ঠিকানাও গোপন রাখা হবে অথবা প্রয়োজনে সে সব তথ্য জানতে নাও চাওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ দিনের সেমিনারে ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে ইভটিজিং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয় পুলিশ কর্তাদের কাছে। কমিশনারের কথায়, ‘‘ইভটিজিং রুখতে মোবাইল ভ্যানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকে নজরদারি চলছে। সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। মহিলা থানার পরিকাঠামোও বাড়ানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy