Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ছেলের বেতন কেটে মাকে খোরপোষ

মায়ের অভিযোগ শুনে নির্দেশ মহকুমা শাসকের আদালতের

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছেলের বিরুদ্ধে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বৃদ্ধা মা। তদন্তের পরে ওই শিক্ষকের বেতন থেকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা কেটে মায়ের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে স্কুল পরিদর্শককে (ডিআই) নির্দেশ দিল মহকুমা শাসকের মেন্টেন্যান্স ট্রাইবুনাল আদালত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছেলের বিরুদ্ধে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বৃদ্ধা মা।

তদন্তের পরে ওই শিক্ষকের বেতন থেকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা কেটে মায়ের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে স্কুল পরিদর্শককে (ডিআই) নির্দেশ দিল মহকুমা শাসকের মেন্টেন্যান্স ট্রাইবুনাল আদালত। তবে ১৭ জুন ওই নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও তিনি টাকা পাননি বলে অভিযোগ ওই বৃদ্ধার।

সত্তরোর্ধ কাবেরী পাল গত বছর বুনিয়াদপুরে গঙ্গারামপুর মহকুমাশাসকের আদালতে খোরপোষের মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র ছেলে রথীন্দ্রনারায়ণ ওই চাকরি পায়। এরপর ছেলে বিয়ে করার পর গণ্ডগোল শুরু হয়। ছেলেই তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে কাবেরীদেবী আদালতে অভিযোগ করেছিলেন। কাবেরীদেবীর ছেলে রথীন্দ্রনারায়ণ দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের তৃণমূলের শিক্ষক সমিতির নেতা।

আদালতের বিচারক, মহকুমাশাসক অনুকুল সরকার গত মাসের ১৭ জুন নির্দেশ দেন ওই শিক্ষকের বেতন থেকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা কেটে মায়ের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। তার সঙ্গে গত ১১ মাসের ভরণপোষণ বাবদ বকেয়া আরও ৫৫ হাজার টাকা বেতন থেকে কেটে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সে জন্য প্রতি মাসের ওই পাঁচ হাজার টাকার সঙ্গে আরও তিন হাজার টাকা করে কেটে নেওয়ার নির্দেশও তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। যদিও কাবেরীদেবীর ক্ষোভ, আদালতের নির্দেশের পরে প্রায় এক মাস কাটলেও এখনও টাকা মেলেনি। জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক মহাদেব শৈব অবশ্য বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে ওই শিক্ষকের বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন তিনি টাকা পাচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

মাকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করে রথীন্দ্রনারায়ণবাবু বলেন, ১০ বছর আগে মা নিজেই বাড়ি ছেড়ে মালদহের পাকুয়াহাটে বোনের শ্বশুরবাড়িতে এবং বংশীহারির বদলপুরে মামার বাড়িতে গিয়ে থাকতেন। তিনি ফ্যামিলি পেনশনও পান। প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দিতে রাজী হলেও তাঁর মা মানেননি বলে রথীন্দ্রবাবুর দাবি। এখন আদালতের নির্দেশ মেনে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা বেতন থেকে কেটে নিলে ছেলে ও অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সমস্যায় পড়বেন বলে তিনি জানিয়েছেন। কেননা প্রতি মাসে ঋণের কিস্তির ১১ হাজার টাকা এবং প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা কেটে হাতে বেতনের সামান্য টাকা পান বলে ওই শিক্ষক দাবি করেছেন।

কাবেরীদেবী অবশ্য জানিয়েছেন, ফ্যামিলি পেনশনের ওই পাঁচ হাজার টাকায় চিকিৎসার খরচ কুলোয় না। তাই ছেলের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছি। তিনি বলেন, ‘‘নিজের স্বামীর বাড়ি থাকতে আমাকে এই বয়সে বাবার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য মালদহের পাকুয়াহাটে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মাঝে মধ্যে থাকতে হয়। ঠিকমতো চলতে পারিনা বলে প্রতিবার ডাক্তার দেখাতে ট্যাক্সি ভাড়া করে পাকুয়াহাটে যেতে হয়। আদালত আমার অসহায় পরিস্থিতির কথা ভেবে ওই আদেশ দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District magistrate court Salary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE