ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে পেটের প্রচুর রক্ত জমাট বেঁধে প্রাণ সংশয় হয়ে উঠেছিল এক মহিলার। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত সফল অস্ত্রোপচার করে তাঁর প্রাণ বাঁচালেন বালুরঘাট হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন মুস্তাফি। শনিবার সকালে বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনা।
এই ঘটনায় সাফল্যের খতিয়ানে ফের আর একটি পালক যুক্ত হল বালুরঘাট হাসপাতালে। হাসপাতালের সুপার তপন বিশ্বাস জানান, ওই প্রসূতি টপি ঘোষ আপাতত বিপন্মুক্ত। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সহ-চিকিৎসকদের সহায়তায় মহিলাকে বাঁচানো গিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, হিলি তিওড়ের ফেরুসা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা পেটের ব্যথা নিয়ে শনিবার ভোরে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি হন। অ্যাসিড থেকে পেটের ব্যথা ভেবে তাঁকে জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসা বিভাগে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ওষুধ ইঞ্জেকশনে কোনও কাজ হয়নি। টপির পেটের ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে। দ্রুত পালস রেটও নেমে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাকা হয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জনকে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রঞ্জন এ দিন বলেন, ‘‘সকাল ৭টা নাগাদ গিয়ে দেখি ওই মহিলা রক্তশূন্য হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকে রোগের কারণ ধরে তাঁর দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই।’’ রঞ্জন বলেন, ‘‘দুই হাত ও পায়ে স্যালাইন দেওয়ার সঙ্গে রক্ত দেওয়া শুরু হয়। পাশাপাশি শুরু হয় অস্ত্রোপচার। ফেটে যাওয়া ফ্যালোপিয়ান টিউব কেটে বাদ দিয়ে পেটের ভেতর থেকে জমাট বেঁধে থাকা প্রায় ৪ লিটার রক্ত বের করা হয়। প্রায় আধঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে বিপন্মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। চার বোতল রক্ত দেওয়ার পর তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ইউটেরাসের বদলে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে গর্ভসঞ্চার হওয়ায় দেখা দেয় জটিলতা। ঋতুস্রাব নিয়মিত হওয়ায় তিনিও বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। এরপর টিউব ফেটে ক্রমশ রক্তক্ষরণে তাঁর অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে।’’
মহিলার এক আত্মীয়া পপি দাস ঘোষের কথায়, ‘‘টপির ২১ ও ১৯ বছরের দুই মেয়ে রয়েছে। তা ছাড়া ওর প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব হত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি কেউ ধরতে পারিনি। শুক্রবার যন্ত্রণা বাড়াবাড়ি হলে ফের বালুরঘাটে গিয়ে বেসরকারি চিকিৎসককে দেখানো হয়। কিন্তু রাত থেকে প্রচণ্ড পেটের ব্যথা শুরু হয়ে ক্রমশ নিস্তেজ হতে দেখে ভোরবেলা বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।’’ ওটিতে অ্যানাস্থেসিস্ট অরিন্দম দাস ও নার্সদের সহযোগিতায় ওই মহিলার প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়েছে বলে রঞ্জন জানান। টপির স্বামী, পেশায় দই বিক্রেতা চিত্ত ঘোষ বলেন, ‘‘হাসপাতালের চিকিৎসকের চেষ্টায় মরণাপন্ন স্ত্রীকে ফিরে পেলাম।’’