Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অন্ধকারে বসে ভাবি, আরও কত অন্ধকার বাকি! খেতেই পাই না, নতুন জামা কোথায় পাব!

ওঁর ঢোল থেমেছে, নিভেছে আলোও

একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আমি কেমন রয়েছি, সেই খোঁজটা নেওয়ার সময়ও কেউ পাননি।

ভারতী হাজরা

ভারতী হাজরা

ভারতী হাজরা, প্রয়াত ঢোলবাদক বলরাম হাজরার স্ত্রী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

স্বামীর মৃত্যুর পরে এক লহমায় যেন সব রোশনাই নিভে গেল।

কিন্তু দিনগুলি ভুলি কী করে? প্রতি বছরই বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়ানোর আগেই বাড়িতে ঢাকিদের লাইন পড়ে যেত। ঢাক কাঁধে নিয়ে ‘গুরু’র পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতে শিষ্যদের অপেক্ষাটাও সেই সকাল থেকেই শুরু হত। তবে গুরু কাউকে অপেক্ষা করাতেন না। হাসিমুখে বলতেন, “যা ভাল করে পুজোয় ঢাক বাজিয়ে আয়। আমার আশীর্বাদ তোদের সঙ্গে রয়েছে।” পুজো শেষে আবার তাঁরা আসতেন। পুজো মণ্ডপে তাদের সাফল্যের গল্প শুনিয়ে যেতেন গুরুকে।

বহু বছর ধরে পুজোর মুখে এমন দিন দেখতে আমি অভ্যস্থ ছিলাম। কিন্তু গতবার থেকে পুজোর মুখে বাড়ি ফাঁকা। গত বছর এপ্রিলে স্বামীর মৃত্যু হয়। তার কয়েক মাস পর পুজো ছিল। কিন্তু আর বাড়িতে তাঁর কোনও শিষ্য আসেননি। একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আমি কেমন রয়েছি, সেই খোঁজটা নেওয়ার সময়ও কেউ পাননি। ওহ! একটা কথা তো বাদই পড়ে গেল। পুজোর সময় আমার স্বামীর সঙ্গে যাঁরাই দেখা করতে আসতেন, প্রত্যেকেই তাঁর জন্য ধুতি-গেঞ্জি নিয়ে আসতেন। এ বার সেই নতুন কাপড়ও নেই। গত বার ছেলে পুজোয় ‘নতুন’ কাপড় পেয়েছিল। সেই ‘নতুন’ কাপড় কী ছিল জানেন? স্বামীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পুরোহিতের নির্দেশে ছেলের জন্য গেঞ্জি কিনেছিলাম। সেটা নতুন দেখাচ্ছিল। তাই পুজোর সময় ওটাই ওকে পড়িয়েছি। কিন্তু এ বার আর সেই উপায়ও নেই।

এখন আমরা মা-ছেলে একবেলার খাওয়া দু’বেলায় খাই। তা ছাড়া আর কী করব? টাকাই তো নেই! তাঁরই চিকিৎসার জন্য তাঁর সেই সাধের ঢাকটা পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও বাঁচাতে পারলাম না। মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধর টাকা জোগাড় করতে স্বামীর গাড়িটা বিক্রি করতে হয়েছিল। তারপর এক এক করে তাঁর সাইকেলটা পর্যন্ত। আর দিন কয়েক আগে আমরা মা-ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে বাড়ির পিছনে থাকা বড় গাছটাও বিক্রি করে দিলাম। ওষুধটা তো কিনতে হবে!

আমাদের একটা পয়সাও রোজগার নেই। একটু চাল, ডাল বা আলু চেয়ে খাচ্ছি। কিন্তু দু’জনের কেউ অসুখে পড়লে ওষুধ কিনতে আর কী বিক্রি করব, সেটাই ভাবি। সম্বল বলতে তো তাঁর ঢোল আর হারমোনিয়ামটা। জানি না আর কত দিন রাখতে পারবো!

তাঁর মৃত্যুর পর নেতারা অনেকেই এসেছিলেন। আমরা মা-ছেলে যাতে একটু বেঁচে থাকতে পারি, সেই সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সাহায্য কোথায়! পুজোর দিনে এক সময় সব আলোয় ভরে থাকত। এখন অন্ধকারে বসে ভাবি, আরও কত অন্ধকার অপেক্ষায় রয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

2019 Durga Puja Special Drummer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE