Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Pottery Art

চাহিদা থাকলেও বাড়েনি দাম, বালুরঘাটের পাল পাড়ায় নতুন প্রজন্ম মুখ ফেরাচ্ছে মৃৎশিল্প থেকে

সামনেই কালীপুজো। পালপাড়ায় দিন-রাত এক করে বাড়ির সকলকে নিয়ে চলছে প্রদীপ তৈরির কাজ। প্রদীপের পাশাপাশি ধুনুচি, মাটির হাড়ি, পিলসুজও তৈরি করেন শিল্পীরা।

image of earthen light

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪০
Share: Save:

দুর্গাপুজো, কালীপুজো থেকে নবান্ন পার্বন— এখনও কমেনি মাটির প্রদীপের চাহিদা। কিন্তু কমেছে লাভ। দিন দিন তৈরির খরচ বাড়ছে। সেই তুলনায় বাড়েনি মাটির প্রদীপের দাম। আর এতে একটু বিপাকে বালুরঘাটের পরানপুর পালপাড়ার সহদেব, মহাদেব পালেরা।

সামনেই কালীপুজো। পালপাড়ায় দিন-রাত এক করে বাড়ির সকলকে নিয়ে চলছে প্রদীপ তৈরির কাজ। প্রদীপের পাশাপাশি ধুনুচি, মাটির হাড়ি, পিলসুজও তৈরি করেন শিল্পীরা। আগে সব পুজোতেই মাটির প্রদীপের চাহিদা ছিল খুব বেশি। এখনও সন্ধিপুজোয় ১০৮টি এবং ভূত চতুর্দশীতে ১৪টি মাটির তৈরি প্রদীপ ব্যবহার হয়। তাই কাজের অভাব নেই পালপাড়ার শিল্পীদের। কিন্তু পরিশ্রমের যোগ্য টাকা তাঁরা পান না। সে কারণে এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম। কিছু শিল্পীর বাড়িতে মোটর চালিত চাকার ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ বাড়িতে এখনও চাকা হাতে ঘুরিয়েই মাটির জিনিসপত্র তৈরি হয়। উপযুক্ত মাটি তৈরি করে তা দিয়ে পাত্র বানানো, সেই পাত্রকে রোদে শুকিয়ে রং করে পোড়াতে যে পরিশ্রম হয়, সেই অনুপাতে উপার্জন হয় না বলে আক্ষেপ মৃৎশিল্পীদের।

পাত্র গড়ার জন্য মাটি তৈরি করতে রোজ অন্তত চার জন শ্রমিক কাজ করেন। মাটির পাত্র যেখানে পোড়ানো হয়, সেই ভাটা তৈরি করতে ১৫ দিন সময় লাগে। চার জন করে শ্রমিক ১৫ দিন ধরে সেই কাজ করলে তাঁদের কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। পারিশ্রমিকের পাশাপাশি কাঁচামালের দামও রয়েছে। এক ট্রাক্টর মাটির দাম ৭০০ টাকা। একটি ভাটায় মাটির পাত্র পোড়াতে প্রায় ২০০০ টাকার কাঠ লাগে। অথচ এখনও কিছু জিনিসপত্রের দাম এক রয়ে গিয়েছে। কিছু জিনিসের দাম আবার কমে গিয়েছে। যে কারণে লাভ থেকে বঞ্চিত মৃৎশিল্পীরা।

মহাদেব পাল বলেন, ‘‘বাজারে মাটির জিনিসের চাহিদা সারা বছর। আমরা সংস্কারের কারণে বৈশাখ মাসে কাজ বন্ধ রাখি। বাকি ১১ মাসে নানা কাজ থাকে। পুজোর মরসুমে চাপ একটু বেশি। যতই বৈদ্যুতিক আলো লাগানো হোক, মাটির প্রদীপের চাহিদা কমেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প।’’

পালপাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দাই বাংলাদেশ থেকে এপারে চলে এসেছিলেন ৭০ দশক থেকে ৯০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়। ছিন্নমূল মানুষগুলি ভিটেমাটি হারিয়ে এপারে এসে নিজেদের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে পূর্বপুরুষের পেশাকেই বেছে নেন। আজও পালপাড়ার সব বাড়িতে ভাটা ও চাকা রয়েছে। মাটির কাজ কমবেশি সকলেই করেন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই শিল্প থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। কোনও পরিবারেই আর নতুন প্রজন্ম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না, আক্ষেপ করে বলেন সহদেব পাল। তাঁর কথায়, ‘‘এত পরিশ্রম নতুন প্রজন্ম করতে চায় না। মাটি তৈরি করতে দম লাগে। কতদিন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব, সন্দেহ রয়েছে। আমাদের প্রজন্ম শেষ হলেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে মাটির কুমোরপাড়া।’’ তাঁর মতে, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। তাঁদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য জিনিস তৈরির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এখন চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড় আবার ফিরেছে। অনুষ্ঠান বাড়িতে মাটির থালা, গ্লাস, বাটির চাহিদা বেড়েছে। দরকার প্রশিক্ষণ। আর একটু মূলধন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pottery Art Balurghat Potter Kali Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE