চডুইভাতিতে গজরাজ: শীতের দুপুরে চলছিল বনভোজন।গন্ধ পেয়ে উপস্থিত হাতি।
নিজের পাড়ায় কোনও ভোজবাড়িতে ভালমন্দ রান্না হলে, উঁকিঝুঁকি মারা কি খুব বড় অপরাধ? গত সোমবার বেংডুবির জঙ্গলে গাছগাছালির আড়াল থেকে বেরিয়ে চড়ুইভাতির আসরের সামনে এসে দাঁড়ানো হাতিটিকেও দোষ দেননি প্রায় কেউই। গরম ভাতের গন্ধ জঙ্গলের গভীরে ভেসে ম-ম করবে, আর জঙ্গলবাসী প্রাণীরা একটুও আকৃষ্ট হবে না, তা কি হয়!
প্রশ্ন হল, নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কারা কী ভাবে জঙ্গলে ঢুকে গিয়ে উনুন জ্বালিয়ে রান্না শুরু করল? শুধু এক দিন নয়, তার পরেও লোকজনকে জঙ্গলের ভিতরে চড়ুইভাতি করতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীতে বনভোজনের দেদার দল চোখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়েই। মহানন্দা থেকে গরুমারা বা বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল হোক অথবা ডুয়ার্সের কোনও বনাঞ্চল— একই অভিযোগ সর্বত্র। তবে বন দফতরের আধিকারিকেরা অভিযোগ মানেননি।
পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, বন্যপ্রাণীরা লবণযুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করে। জঙ্গলে মেলা লবণ খেয়ে কার্যত একঘেয়ে জীবন কাটে তাদের। তারই অবসরে মাঝেমধ্যেই বনবস্তি বা জঙ্গল লাগোয়া বাড়ির রান্নাঘর ভেঙে বুনো হাতির ভাত খেয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা শোনা যায়। স্কুলের রান্নাঘর ভেঙে মিড-ডে মিলের চাল, মুদির দোকানের নুন, মশলা, চাল, ডাল হাতির দল মহানন্দে সাবাড় করেছে— সে সবও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা জঙ্গল লাগোয়া এলাকায়। তাই হাতি যদি নিজেদের ‘পাড়াতেই’ রান্না করা খাবারের উষ্ণ সুবাস পায়, তা হলে জঙ্গল ছেড়ে তাদের বেরিয়ে আসা খুবই স্বাভাবিক— এমনই মত বন্যপ্রাণপ্রেমীদের।
জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের ধারে বহু চড়ুইভাতির দলের দেখা মিলেছে। গরুমারা, চাপড়ামাড়ি, কাঠামবাড়ি জঙ্গলের পাশেও চড়ুইভাতি হয়েছে। যদিও এ দিন বন্যপ্রাণীদের তেমন আসরে এসে হাজির হওয়ার কথা শোনা যায়নি। তবে এমন চলতে থাকলে, ফের সে ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয় বলে দাবি পরিবেশপ্রেমীদের।
বেংডুবির জঙ্গলের মধ্যে এক চিলতে ফাঁকা ঘাসজমিতে চড়ুইভাতির জন্য বিছানো পলিথিনের উপরে রাখা হাঁড়ি-কড়াই, বাজারের ব্যাগের সামনে এসে দাঁড়ানো হাতিটির ছবি গত মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পরে, সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশপ্রেমী রাজা রাউত বলেন, “চড়ুইভাতির আসরে হাজির হাতিটিকে ভালবেসে নেটমাধ্যমে চড়ুইহাতি বলেও ডাকাডাকি হয়েছে। বন্যপ্রাণীদের ডেরায় গিয়ে এমন ভাবে চড়ুইভাতি করলে, কিন্তু তাদের বিরক্ত করাই হয়।’’
বন দফতরের বাগডোগরা রেঞ্জের আধিকারিক সমীরণ রাজের দাবি, নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তার পরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জঙ্গলে ঢুকে বনভোজন করলে, আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন বৃহস্পতিবার বেংডুবির সেন্ট্রাল বস্তিতে অবশ্য কাউকে বনভোজন করতে দেখা যায়নি বলে দাবি।
গরুমারা, চাপড়ামারি মহানন্দার মতো জঙ্গলের কাছে এলাকায় পিকনিকের আয়োজন অনেক দিন ধরে নিষিদ্ধ। তার পরেও মাঝেমধ্যে দু’-একটি দল ঢুকে যে পড়ে না, তা অস্বীকার করছেন না বনকর্মীদের একাংশ। তবে বেংডুবির ঘটনার পরে, এ দিন জঙ্গলের ভিতরে তেমন দল দেখা যায়নি। গরুমারা রেঞ্জের আধিকারিক অয়ন চক্রবর্তী জানান, জঙ্গলের খুব কাছাকাছি কোনও বনভোজনের দলকে যেতে দেওয়া হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy