প্রদর্শনীতে জমা পড়ে এমনই নানা আকারের কাঁঠাল। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
প্রদর্শনীকে হাতিয়ার করে এ বার উত্তরবঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে উৎসাহ বাড়ানোর কাজে নামল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারের পুন্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ওজনের নিরিখে মোট তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক ওই প্রদর্শনীতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪৫ জন চাষি যোগ দেন। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাঠাঁল এখন অন্যতম অর্থকরী ফল। উত্তরবঙ্গে ওই ফল চাষের ব্যাপক সম্ভবনাও রয়েছে। সব মিলিয়েই বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে উৎসাহ বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিচ্ছি। সেই সঙ্গে শিল্পের সঙ্গে ওই ফল উৎপাদনের যোগসূত্র নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়।”
প্রতিযোগিতায় ১-৫ কেজি বিভাগে কোচবিহারের মধুপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব দেব, ৫-১০ কেজি বিভাগে ফালাকাটার বাসিন্দা মজিবুর মিঁয়া ও ১০ কেজি বা তার বেশি ওজনের বিভাগে চন্দনচৌড়ার হরিপদ দাসের দেওয়া কাঁঠাল প্রথম পুরস্কার পায়। প্রথম স্থানাধিকারী চাষিদের নগদ দেড় হাজার টাকা ও শংসাপত্র দেওয়া হয়। প্রতিটি বিভাগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীরা নগদ এক হাজার ও পাঁচশ টাকা-সহ শংসাপত্র পেয়েছেন। এ ছাড়াও ছ’জন চাষিকে নগদ দুশো টাকা ও শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে। প্রদর্শনীর সঙ্গে কাঁঠাল চাষের সম্ভাবনা, সুফল, অনুসারী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে উৎসাহী চাষিদের নিয়ে আলোচনাচক্রও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তাদের দাবি, ওই প্রথম উদ্যোগে ভাল সাড়া মিলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁঠাল উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে প্রথম। তারপরেই রয়েছে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মত দেশগুলি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও এ দেশের কেরল ও কর্ণাটকে প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদন হয়। উত্তরবঙ্গের সাত জেলাতেও কাঁঠাল চাষ হয়। তবে তা নেহাতই গতানুগতিক। মূলত বাড়ি, জমির পাশে বিক্ষিপ্তভাবে ওই ফলের গাছ লাগানো হয়। বাণিজ্যিকভাবে কোথাও সেভাবে চাষের প্রবণতা শুরুই হয়নি। অথচ কাঁঠাল চাষ করলে ফি বছর অন্য ফসলের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। সেকথা মাথায় রেখেই এবারই প্রথম কাঁঠাল প্রদর্শনীর পরিককল্পনা নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান বিদ্যা অনুষদের অধ্যক্ষ জগদীশ জানা বলেন, “সংগৃহীত কাঁঠালের বীজ সংরক্ষণ করে উন্নত জাতের চারা তৈরির ভাবনাও রয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উত্তরের জেলাগুলিতে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়। ফি বছরে গড়ে ফলন হয় ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। কোচবিহার জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩১ হাজার মেট্রিক টন ফলন হয়। জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল ও ফলনোত্তর প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের প্রধান প্রদ্যুত কুমার পাল বলেন, “উন্নত জাতের কলম চারা তৈরি করে চাষিরা গড়ে দু’বছরের মধ্যে ফলন পেতে পারেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে কাঁঠালের জন্য নির্ধারিত জমির ফাঁকা অংশের মাটি রকমারি সব্জি চাষের কাজেও লাগানো যেতে পারে।”
তবে কয়েকজন চাষি জানান, ভাল দাম মেলার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy