Advertisement
১৯ মে ২০২৪
লজ্জা। ঘৃণা। ভয়

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙায় ছিঃ! বলছেন সকলে

শিলিগুড়ির বাসিন্দা থেকে প্রতিবাদে নামা অনেক নেতাই মনে করেছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে কেবলমাত্র বাঙালি নয়, বরং নবজাগরণের মূল কাঠামোতেই আঘাত করেছে মৌলবাদ।

শিলিগুড়িতে মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শিলিগুড়িতে মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

ভোটযুদ্ধে ঘরবাড়ি ভেঙেছে। আগুন ধরেছে মহল্লায়। একে অন্যকে লক্ষ করে হুমকির ভাষার সঙ্গে কোথাও কোথাও শোনা গিয়েছে গুলির শব্দও। কিন্তু মঙ্গলবার ভোটের শেষলগ্নে এসে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে যা হয়েছে, তাতে ভাষা হারিয়েছেন বহু মানুষ। বিশিষ্টজন থেকে রাজনৈতিক নেতা, অনেকেই মনে করেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি গুঁড়িয়ে আসলে বাঙালির মেরুদণ্ডেই আঘাত করা হল। কে ভাঙল, কারা ভাঙল, কে রুখল— এই দোষারোপের পালার মধ্যেই মানুষের প্রশ্ন, ‘এ লজ্জা আমরা ঢাকব কীসে!’

শিলিগুড়ির বাসিন্দা থেকে প্রতিবাদে নামা অনেক নেতাই মনে করেছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে কেবলমাত্র বাঙালি নয়, বরং নবজাগরণের মূল কাঠামোতেই আঘাত করেছে মৌলবাদ। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদী বিজেপি পরিকল্পনা করেই নবজাগরণের জাতীয় ইতিহাস থেকে বাংলার নাম মুছে তাদের সংস্কৃতি চাপাতে চাইছে। বাঙালির জাতিসত্ত্বায় আঘাত করার মতো এই লজ্জা কেউ মেনে নেবে না।’’

শিলিগুড়িতে মূর্তি ভাঙার ইতিহাস রয়েছে। আশির দশকে বাম আমলে সুভাষপল্লি এলাকায় চারু মজুমদারের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে দুষ্কৃতীরা বিনয়, বাদল, দীনেশের মূর্তিতে আঘাত হেনেছিল। চারু মজুমদারের ছেলে অভিজিতের কথায়, ‘‘সঙ্ঘ, বিজেপি নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় না। কিন্তু বাংলায় নবজাগরণের পথিকৃৎ বিদ্যাসাগর আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া ফেলেছিলেন। তাই এই পরিকল্পিত তালিবানি আঘাত।’’

কংগ্রেসের তরফেও মনে করা হচ্ছে, এই লজ্জা ঢাকবে না। বামেদের সুরেই তৃণমূল-বিজেপিকে এর জন্য দায়ী করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘জাতীয় স্তরে বিদ্যাসাগরের ভাবমূর্তিতে কালি পড়েছে। তৃণমূল সরকার দুষ্কৃতীদের শাস্তি দিলেই শুধু লজ্জা ঢাকা সম্ভব।’’

মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে এ দিন বামফ্রন্ট, তৃণমূল প্রভাবিত বিশিষ্টজনের মিছিল হয়। চিলড্রেন্স পার্কে বামফ্রন্টের তরফে বিদ্যাসাগর মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান লেখক শিল্পী সঙ্ঘ, শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিকেলে তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক এবং বিশিষ্টজনেরা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন সেখানে। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘এই লজ্জা ঢাকতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’ বিজেপির দার্জিলিং (সমতল) অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘লজ্জাজনকভাবে মূর্তি ভেঙে বিজেপির উপর দায় চাপাচ্ছে তৃণমূল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE