রাস্তায় যেন টোটোর মেলা। ছবি: অমিত মোহান্ত
প্রশাসনিক পদক্ষেপের আশঙ্কায় শাসক এবং বিরোধী—দুই শিবিরে নাম লিখিয়ে টোটোর দাপট বেড়েই চলেছে। এই অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের সদর বালুরঘাট শহরে। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার টোটোর ভিড়ে বালুরঘাট শহরে পথ চলাই দায় হয়ে পড়েছে। তীব্র যানজটে নিত্য ভোগান্তিতে পড়ছেন শহরবাসী। টোটো দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু ও পথচারীরাও হরদম জখম হচ্ছেন। এখনও টোটোর ক্ষেত্রে বৈধতা-অবৈধতার নিয়ম লাগু না হওয়ায় শ্রমিক সংগঠনের রাজনৈতিক-ঢালের আশ্রয়ে শহরময় দেদার টোটো চলতে থাকায় সমস্যা দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ।
সরকারি সূত্রের খবর, ভোটের আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর প্রাক্তন বিচারপতি, মুখ্যসচিব, পরিবহণ সচিব এবং পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্ব একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে টোটোর বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ সুনিশ্চিত করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৈধ ও অবৈধ টোটো এবং ভ্যানোর সংখ্যা কত, তাও জানতে চেয়েছে আদালত। আপাতত প্রশাসনের তরফে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর তাতেই তড়িঘড়ি শহর জুড়ে দোকান খুলে রাতারাতি টোটো তৈরি করার হিড়িক শুরু হয়েছে।
জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘টোটো নিয়ে পরিবহণ সচিবের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। তাতে নতুন করে টোটো তৈরি বন্ধ করতে অভিযানে নেমে দোকানগুলি সিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরসভা শহরের প্রায় ৫০০ টোটোকে লাইসেন্স দিয়েছে। প্রশাসনের কাছেও প্রচুর দরখাস্ত জমা পড়েছে।’’ শহরের কোন রাস্তা কত সংখ্যক টোটো চলাচলের উপযুক্ত, তা খতিয়ে দেখে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে বলে জেলাশাসক জানান।
টোটোর সঙ্গে বেকার যুবকদের আর্থ সামাজিক বিষয় জড়িত থাকার প্রশ্ন তুলে গত তিন বছর ধরে সরকারি স্তরে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে স্থানীয় ভাবে যেমন খুশি পদ্ধতি অবলম্বন করায় শহরে লাগামহীন টোটো-রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন উঠতেই সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ। মাত্র গত বছরই তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভা এতে হস্তক্ষেপ করে টোটো প্রতি ১৫০০ টাকার বিনিময়ে নম্বরপ্লেট ও পরিচয়পত্র বিলি করে। সে সময়ই প্রায় ৫০০ টোটোকে শহরে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পুরসভার অনুমতিবিহীন টোটোর সংখ্যা বাড়তে থাকায় যানজটও পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
পুর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে দায় এড়িয়ে প্রশাসনের দিকে বল ঠেলে দিয়েছে। এক বছর আগে লাইসেন্স দিলেও টোটোগুলির পুনর্নবীকরণ করা হচ্ছে না। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল বলেন, ‘‘টোটোর দায়িত্ব এখন আমাদের নয়। প্রশাসনই বিষয়টি দেখবে।’’ জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘হাইরোডে টোটো চলতে পারবে না। তা ছাড়া কতগুলি টোটো শহরে চলবে, সে বিষয়ে পুরসভা অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এখন টোটোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট নেবেন।’’
কিন্তু সম্প্রতি যান নিয়ন্ত্রণে নেমে পুলিশ রাস্তা থেকে অনুমতিহীন টোটো ধরতেই আসরে নেমেছে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। টাকার বিনিময়ে টোটো চালকদের অনুমতি দেওয়া চলছে বলে তৃণমূল এবং কংগ্রেস প্রভাবিত সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। আইএনটিটিইউসি-র দিকে বেশি সংখ্যক টোটো চালকেরা নাম লেখালেও আইএনটিইউসি-র ছাতার তলাতেও বেশ ভিড়। আলাদা করে ওই টোটোগুলিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এবং জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের ছবি লাগানো স্টিকার ব্যবহার করে ধরপাকড়ে পুলিশের উপর চাপ তৈরির উদ্দেশ্য কাজ করছে বলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ। পাশাপাশি পুলিশকে প্রভাবিত করে তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত টোটোগুলিকে ধরা হচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ কংগ্রেসের।
তৃণমূলের জেলা টোটো ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন সরকার বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে প্রশাসন টোটো নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করুক।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘নম্বরপ্লেটহীন টোটোগুলি থেকে টাকা তুলছে কংগ্রেস প্রভাবিত সংগঠন। আমরা এর বিরুদ্ধে শীঘ্রই আন্দোলনে নামব।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘তৃণমূলের চাপে পুলিশ টোটো ধরছে। আবার টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ফলে টোটো চালকেরা আমাদের সংগঠনের দিকে ঝুঁকছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy