বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন পোড়াঝার এলাকা। রবিবার ভোরে মহানন্দা নদীর বাঁধের একাংশ ভেঙে যায় সেখানে। বাঁধের পাশে চর এলাকার কয়েকশো বাড়িতে জল ঢুকেছে। জলের তোড়ে বাড়ি ভেঙেছে পাঁচটিরও বেশি। অসহায় পরিবারগুলি স্থানীয় ক্লাব, স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। কারও আশ্রয় হয়েছে বাঁধের উপরেই।
পোড়াঝারে মহানন্দা নদীর চরে বাঁধের পাশে নদীর চরে কয়েকশো পরিবারের বাস। বাঁধের ভিতরেই কংক্রিটের রাস্তা। জলের তোড়ে সেই রাস্তার একাংশও এ দিন ভেঙেছে। রাস্তা যেখানে বাঁধের সঙ্গে মিশেছে সেখানেই ভেঙে বিশাল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিছু কৃষি জমিতে জল ঢুকে চাষে ক্ষতি হয়েছে।
প্লাবিত হয়েছে শিলিগুড়ি আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসাবাড়ি। সেখানে বালাসনের জলের স্রোতে চারটি বাড়ি ভেসে গিয়েছে। পরিবারগুলি পাশের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। খাপরাইল মোড়ের পাশে বালাসন নদীর উপর নতুন সেতুর কাজ চলছিল। অভিযোগ, জলের স্রোতে সেতুর নির্মাণ সামগ্রী ভেসে গিয়েছে। তবে ভারী সামগ্রীগুলিকে জল থেকে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মাটিগাড়া এক গ্রাম পঞ্চায়েতের নিমতলায় একধিক পরিবার জলমগ্ন। সেখানে প্রশাসন সরকারি সাহায্য বিলি করেছে। খড়িবাড়ি ডাঙ্গুজোতে মেচি নদীর জলে ঢুবেছে গ্রাম। নকশালবাড়িতেও কয়েকশো পরিবারে বৃষ্টির জল ঢুকেছে। কারও বাড়িতে সারাদিন উনুন জ্বলেনি, কেউ শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছেন।
ফুলবাড়ি, পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ড-সহ একাধিক এলাকায় যান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মেয়র বলেন, ‘‘প্রশাসনকে কারও যাতে সমস্যা না হয় তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ পোরাঝারের বন্যায় জলের তোড়ে হেলে যাওয়ার বাড়িটার দিকে এক দৃষ্টতে তাকিয়ে ছিলেন বিপিন বর্মণ। টোটো চালিয়ে সংসার। সেটিও গর্তে বালি চাপা পড়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজ সরাতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর পা কেটে গিয়েছে। বিপিন বলেন, ‘‘ভোর চারটে নাগাদ বিছানা থেকে নামতে গিয়ে দেখি ঘরে হাঁটু জল। তরিঘড়ি ছেলেদের বাইরে বার করে বাঁধের উপর আনতে পেরেছি। বাকি সব ভেসে গিয়েছে।’’
মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি রোমা রেশমি এক্কা, কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহরাও এলাকায় ঘুরে মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকায় যান বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। শিখার বক্তব্য, ‘‘উত্তরবঙ্গ বন্যায় ভাসছে আর মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় কার্নিভালে আনন্দ করছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)