ব্যস্ত রাস্তার কোলাহল, গাড়ির হর্ন ভেদ করে মেয়েলি স্বরে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পথচারীরা। এক যুবকের তাড়ায় চিৎকার করে ছুটছেন তরুণী। দৌড়ে তরুণীকে ধরে এলোপাথাড়ি ঘুঁষি চালাচ্ছে সেই যুবক। কাছেই ট্র্যাফিক পুলিশ পোস্ট। পুলিশ-পথচারী সকলের সামনে চলছে তরুণী এবং তাঁর সঙ্গীকে মারধর। যুবকের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় দুপুর বারোটায় শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা মোড়ে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে এক তরুণী ও তাঁর সঙ্গীকে মারধরের ঘটনার অভিযোগে শিউরে উঠেছে জলপাইগুড়ি।
সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছেন অনেকেই। শহরের বিশিষ্টজনেদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এ কোন জলপাইগুড়ি?
মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িকে তো আমরা সংস্কৃতির শহর হিসেবে গর্ব করি। এ দিনের ঘটনা তো সেই গর্বে চুনকালি মাখিয়ে দিল। প্রতিবাদে এখনই রাস্তায় না নামলে কালির দাগ উঠবে না।’’ তরুণীকে মারধরে অভিযুক্ত যুবককে সন্ধেবেলা পুলিশ গ্রেফতার করলেও আশ্বস্ত নন কবি-প্রাবন্ধিক গৌতম গুহরায়। তিনি বলেন, ‘‘এরপর তো দুপুরেও মহিলারা চলাফেরা করতে ভয় পাবেন।’’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পদক্ষেপ ছাড়া মহিলাদের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সমাজকর্মী দীপশ্রী রায়। অনাথ এবং ভবঘুরে কিশোরীদের একটি হোম চালান তিনি। দীপশ্রীদেবীর দাবি, ‘‘হোমের মেয়েদের রাস্তায় একা চলতে শেখাই। এখন কয়েকদিন অন্তত মেয়েদের একা চলাফেরা করার পরামর্শ দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না।’’
শহরেরই বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি এমনটা হওয়ারই ছিল। কদমতলা সহ শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলিতে দুপুর হোক বা সন্ধে একদল যুবক বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। পথ চলতি মেয়েদের লক্ষ্য করে অশালীন মন্তব্য ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। প্রশাসনের উদাসীনতা সেই প্রবণতা দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে বলে অভিযোগ। গবেষক উমেশ শর্মার মন্তব্য ‘‘শাসনহীনতা উশৃঙ্খলতার জন্ম দেয়। জলপাইগুড়ি সে পথে পা বাড়াচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন এ দিনের ঘটনা তুলে দিল।’’ নর্থ বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক পুরজিৎ বক্সিগুপ্ত দাবি করেছেন পুলিশ প্রশাসনকে আরও সর্তক হতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত প্রশান্ত চৌধুরি এ দিন ফেসবুকে এ দিনের ঘটনার প্রতিবাদ লিখে পোস্ট করেছেন। বিকেল থেকে রাত যত গড়িয়েছে ফেসবুকের ই-দেওয়ালে সেই পোস্ট প্রতিবাদ শেয়ার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy