ফাইল চিত্র।
খেত মজুর স্বামীর একা রোজগারে সংসার চলে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিনতি বর্মণও সকাল সকাল ছোটেন ধান রোয়ার কাজে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা এলাকার বিপিএল তালিকাভুক্ত মিনতির মতো আউটিনা এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলেনেত্রী, বিধবা পূর্ণিমা সরকারও সংসার টানতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান তালে দিনভর মাঠে কাজ করেন। পচানো পাট নয়ানজুলিতে ধুয়ে আঁশ বার করার পরে সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেলে তবেই হাতে মেলে মজুরি বাবদ ১৬০ টাকা। অথচ ওই সমপরিমাণ শ্রমে পুরুষ খেতমজুরদের জন্য বরাদ্দ ২৬০ টাকা। দুপুরে ভাতের বদলে মহিলাদের জোটে মুড়ি।
শুধু তপন ব্লকই নয়। অভিযোগ, সমকাজে মহিলা খেতমজুরদের কম মজুরি মেলার ছবি দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে কুশমণ্ডি ব্লকের প্রায় সর্বত্র। মজুরির বৈষম্য রোধে শাসক ও বিরোধী দলের সদস্যরা মাঝেমধ্যে দাবি তোলেন। তাতে অবশ্য হাল ফেরে না সারাবছর রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠঘাটের কাজ করা কুশমণ্ডির দেহাবন্ধের কল্পনা কিস্কু বা কুমারগঞ্জের মোহনা এলাকার খেতমজুর অর্চনা মুর্মু, শ্যামলী বর্মণদের।
তাঁদের কথায়, ‘‘জমির মালিককে কিছু বলা যায় না। ওই মজুরিতে পোষালে করো, নইলে কাজ করতে হবে না, সাফ জবাব তাঁদের। এলাকায় ১০০ দিনের কাজও নেই।’’ রোজগারের আর উপায় না দেখে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন কম মজুরিতে কাজ করতে। অন্য দিকে, তপনের খলসির খেতমজুর আলি মণ্ডল, মজিবর মণ্ডলরা জানান, শ্রাবণে জমিতে ধান বোনা ও পাট ধোওয়ার পরে প্রায় দু’মাস কাজ থাকে না। কার্তিক-অগ্রহায়ণে নতুন ধান উঠলেও বেশির ভাগ জমিতে যন্ত্র বসিয়েই ধান ঝাড়াই করা হয়। ফলে অপেক্ষাকৃত বেশি মজুরির আশ্বাসে পুরুষ শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্যে পাড়ির প্রবণতাও বাড়ছে।
আরএসপির সংযুক্ত কিসানসভার জেলা সম্পাদক সাজাহান সর্দারের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে মহিলা খেত মজুররা চরম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া পুরুষ খেতমজুরদের দুপুরে পান্তা বা গরম ভাত দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে জমির মালিকদের তরফে দুপুরে বরাদ্দ মুড়ি।’’ সিপিএমের সারাভারত কিসানসভার থানা কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘প্রশাসনের কাছে বহুবার আবেদন করেও লাভ হয়নি।’’
জেলা লেবার কমিশনার দফতর সূত্রের খবর, আগে মাঠে ঘুরে মিনিমাম ওয়েজ ইন্সপেক্টাররা মজুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখতেন। এখন ওই পদে কেউ নেই। জেলা শ্রম কমিশনার তপন হালদার বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ হলে খতিয়ে দেখা হবে।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা নেতা মজিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘খেত মজুরদের জন্য ধার্য ৩০০ টাকা। সেখানে পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের কোনও বিভেদ নেই। আমরা পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy