Advertisement
০৬ মে ২০২৪
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তীব্র প্রচার

পঞ্জি প্রচারে বোমা-লাঠি, জখম পাঁচ

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শীতলখুচি থানার ডাকঘরা এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তখন বাজারে ব্যাপক বোমা পড়তে শুরু করে। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন সাধারণ মানুষ।

জলপাইগুড়িতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে রাস্তায় বিজেপি। নিজস্ব চিত্র

জলপাইগুড়িতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে রাস্তায় বিজেপি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শীতলখুচি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

এনআরসি নিয়ে প্রচার পাল্টা প্রচারে পারদ চড়ছিল। এক দিকে, এনআরসি বিরোধী প্রচারে জোর দিতে উঠে পড়ে লেগেছে তৃণমূল। অন্য দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করার পরেই আলিপুরদুয়ারে প্রতিটি গ্রামে আতসবাজি পুড়িয়ে বিজয় উৎসব পালন করার নির্দেশ দেন বিজেপি নেতৃত্ব। কোচবিহারে দুই পক্ষের প্রচারের তীব্রতা এতটাই বাড়ে যে, শীতলখুচিতে এ দিন রীতিমতো সংঘর্ষ বাধে। যা থামাতে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়েছে বলে দাবি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শীতলখুচি থানার ডাকঘরা এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তখন বাজারে ব্যাপক বোমা পড়তে শুরু করে। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন সাধারণ মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালায়। জখমদের মধ্যে ২ তৃণমূল কর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোচবিহার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তৃণমূলের দাবি, তাঁদের মিছিলের জন্য পুলিশের অনুমতি ছিল। তার পরে আচমকা বিজেপি হামলা করে। মিছিল লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। ধারালো অস্ত্র নিয়ে কর্মীদের উপর হামলা করা হয়। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা জয়ন্ত বর্মণ বলেন, “বিজেপি পরিকল্পনা করে মিছিলের উপর হামলা করেছে।” বিজেপি নেতা অভিজিৎ বর্মণের পাল্টা বক্তব্য, “তৃণমূলই পরিকল্পিত ভাবে হামলা করেছে। শুধু বিজেপি কর্মীরাই নন, নিরীহ মানুষদেরও মারধর করেছেন তাঁরা।” ঘটনায় ক্ষুব্ধ ডাকঘরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। তাঁদের অভিযোগ, দু’দলের কোন্দলে বহু টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

তবে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ফের নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কোচবিহারে। রাজবংশী ও কামতাপুরি একাধিক সংগঠন ওই বিলের বিরোধিতায় রাস্তা অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সংগঠনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্রদের জন্য রক্ষাকবচ না দেওয়া হলে জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নেবে তারা। বিলের বিরোধিতায় রাস্তায় নামবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও। বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, ওই বিলের পক্ষে রয়েছে সাধারণ মানুষ। তৃণমূল নানাভাবে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। গ্রেটারে কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অংশ অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে আস্থা রেখেছে।

মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “এনআরসি ও ক্যাব কোনওটি বাংলায় লাগু হতে দেব না আমরা। লাগাতার আন্দোলন হবে।” কামতাপুর পোগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অতুল রায় অভিযোগ করেছেন, “এই বিল উত্তরবঙ্গে লাগু হলে ভূমিপুত্রদের জীবন-জীবিকা, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস হারিয়ে যাবে।” প্রয়োজনে তাঁরা বিলের বিরোধিতায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য রাস্তা বা রেললাইন অবরোধ করবেন। জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন তিনি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর ময়নাগুড়িতে বৈঠকের ডাক দিয়েছে কেপিপি। গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন বর্মণ বলেন, “এই বিল কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা অবশ্য বলেন, “সাধারণ মানুষ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে।’’ গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের অনন্ত রায় (মহারাজ) গোষ্ঠীর পরেশ বর্মণ বলেন, “কেন্দ্রের সরকার সুশাসক। আমরা আশাবাদী আমাদের দাবি মেনে কোচবিহারের ভারতভূক্তি চুক্তি রূপায়নেও সরকার পদক্ষেপ নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Ammendment Bill CAB NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE