Advertisement
E-Paper

মরা মাছ এ বার মহানন্দা ক্যানালে

জাল ফেলতেই উঠে আসছে রাশি রাশি মরা মাছ। আমেরিকান রুই, কাতলা, সিলভার কাপ। পুঁটি, খয়রা, বোরোলিও উঠছে দেদার। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালেও শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানালে জাল ফেলেছিলেন মৎস্যজীবীরা। তবে অন্যদিনের মতো অপেক্ষা করতে হয়নি, জাল ফেলতেই আটকে পড়তে থাকে অসংখ্য মরা মাছ। এই খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। সকাল গড়াতেই মরা মাছ ক্যানেলের জলে ভেসে উঠতে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০২:১৭
মরা মাছ নিয়ে বাসিন্দারা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মরা মাছ নিয়ে বাসিন্দারা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

জাল ফেলতেই উঠে আসছে রাশি রাশি মরা মাছ। আমেরিকান রুই, কাতলা, সিলভার কাপ। পুঁটি, খয়রা, বোরোলিও উঠছে দেদার।

প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালেও শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানালে জাল ফেলেছিলেন মৎস্যজীবীরা। তবে অন্যদিনের মতো অপেক্ষা করতে হয়নি, জাল ফেলতেই আটকে পড়তে থাকে অসংখ্য মরা মাছ। এই খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। সকাল গড়াতেই মরা মাছ ক্যানেলের জলে ভেসে উঠতে থাকে। মরা মাছ সংগ্রহ করতে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। খবর পেয়ে আশপাশের এলাকা থেকেও সাধারণ মানুষ হাঁড়ি-গামলা নিয়ে হাজির হন। যদিও কিছুক্ষণ পর থেকেই মরা মাছের সংখ্যা কমতে থাকে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে তৎপরতা শুরু হয় প্রশাসনেও। ব্লক প্রশাসন থেকে মৎস্য দফতরে খবর দেওয়া হয়। মহানন্দা ক্যানালের জলের নমুনা পরীক্ষা হবে বলে মৎস্য দফতর জানিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, নদীর জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াতে এই ঘটনা ঘটেছে। জলের মধ্যে তীব্র মাত্রার বিষ মিশিয়ে দিলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

শিলিগুড়ির ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার সুরজিত মৈত্র বলেন, ‘‘মাছ মরার খবর শুনেছি। মাছ ও জলের নমুনা সংগ্রহ করার ব্যপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।’’ ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘মৎস্য আধিকারিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বাসিন্দাদের মরা মাছ সংগ্রহ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কেউ মরা মাছ বাজারে বিক্রি করছেন কিনা তাও দেখা হচ্ছে।’’

নদীর জলে বিষক্রিয়া হলে অনেক সময় এমন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যে জায়গায় মাছগুলি পাওয়া গিয়েছে, তার কাছেই খালের বাঁধের জলের স্তর কমানোর জন্য স্লুইস গেট প্রায় ফুটখানেক তোলা রয়েছে। ফলে স্রোতের বেগ সেখানে অনেকটাই বেশি। তাই সেখানে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই আরও কিছুটা দূরে বিষ মেশানো হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বছর চারেক আগে জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করলা নদীতে মাছের মড়ক হয়েছিল। দু’দিন ধরে রাশি রাশি মরা মাছা ভেসে উঠেছিল নদীতে। সে সময় জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায় এন্ডোসালফান নামে একটি নিষিদ্ধ কীটনাশক নদীতে প্রচুর পরিমাণে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। মহানন্দাতে কী হয়েছে তার জন্য অবশ্য রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে। সম্রতি জলপাইগুড়ির পাঙ্গা নদীতেও বিষক্রিয়ার জেরে ভেসে উঠেছিল প্রচুর মরা মাছ।

সোমবার সকাল মৃত মাছ ভেসে উঠতে থাকে বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিন যেখানে ভোর থেকে হত্যে দিয়ে কয়েক ঘন্টা হত্যে দিয়ে বসে থেকেও মেরেকেটে কয়েক কেজি মাছ ওঠে বলে মৎস্যজীবীদের দাবি, সেখানে এ দিন আধ ঘণ্টায় একজনের জালেই উঠেছে প্রায় পাঁচ কেজি মাছ। কেউ চার কেজি আবার কেউ তিন কেজি। মাছ সংগ্রহ করেছেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে একজন রাজকুমার রায় বলেন, সকাল থেকেই মরা মাছ ভেসে আসছিল বলে শুনতে পেয়ে আমরা বেশ কিছু মাছ ধরেছি।’’ অপর একজন মাছ ব্যবসায়ী বিনোদ মাঝি জানান, ‘‘আমরা রোজ মাছ ধরতে আসি। ভোর ৫ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত গড়ে একজন ৭-৮ কেজি মাছ ধরি তারপর নদীর পারে রাস্তাতেই বসে বিক্রি করি। এ দিন আধ ঘণ্টাতেই প্রায় ৫ কেজি মাছ জালে উঠেছে। তারপরে অবশ্য মাছের পরিমাণ বেলা যত বেড়েছে, ততই অবশ্য কমেছে বলে জানান তিনি।

বছর খানেক আগে মাটিগাড়ার কাছে একটি কারখানার দূষিত বর্জ্য জলে মিশে এই এলাকারই জল বিষাক্ত হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এ বারও তেমন কিছু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান মৎস্য দফতরের কর্তারা। এ দিন মরা মাছ ভেসে ওঠার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু। তিনি দাবি করেন, ‘‘দূষণের হার মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়াতেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। শিলিগুড়ি শহরের সমস্ত দূষিত নদীর জল মহানন্দা খালে গিয়ে পড়ে। ফলে এই ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা খুব শীঘ্রই বন্ধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে গভীর সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।’’ এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

Mahananda canal Fish siliguri River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy