Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
দেশ কোথায়

ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা স্বাধীনতা, বলছে সীমান্তের জনবসতি

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এই জনবসতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
ফুলবাড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

সূর্য ডুবলেই যেন দেশের ‘বাইরের’ থেকে যান সেই জনবসতির সকলে। সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যায় কাঁটাতারের বেড়ার ফটক। আর তাতেই দেশ থেকে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়ে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের ফুলবাড়ি গ্রাম।

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এই জনবসতি। তা-ই প্রতি দিন সন্ধ্যার পরে সীমান্তের বেড়ার গেট বন্ধ হলেই কার্যত ‘নিজভূমে পরবাসী’ হয়ে যান ফুলবাড়ির ইসরাইল, রফিকুল নাসিরুদিনরা।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের কথা শুনে দেশ হারানোর আতঙ্ক তা-ই কয়েকগুণ বেশি বেড়ার ওপারের ওই সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের। চিন্তায় ফুলবাড়ির শ’খানেক দরিদ্র পরিবার। ইসরাইলের কথায়, ‘‘স্বাধীন ভারতে থেকেও প্রতি দিন সন্ধ্যার পর থেকে আমরা আজও পরাধীন। যেন ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা আমাদের স্বাধীনতা। পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— সবই বাড়ন্ত! নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে নতুন আইন। মুক্তি চাই এমন বন্দি-জীবন থেকে। যেতে চাই বেড়ার ভিতরে।’’

গ্রামের নাম ফুলবাড়ি। কিন্তু তা ঘেরা কাঁটাতারে। টিন আর খড়ের চালার ছোট ছোট কয়েকটি ঘর। বসতির মধ্যেই তিন তলা উঁচু ফ্লাডলাইট। সেই কাঠামোর উপরে উঠলে দেখা যায়, দুই বাংলার সীমান্ত ছুঁয়ে যাওয়া নাগর নদী, বাংলাদেশের চর।

গ্রামবাসীরা জানান, ১২ মাস ভোটার কার্ড বুকে আগলে ঘুরতে হয় তাঁদের। তবেই কাঁটাতারের ‘৪২ নম্বর গেট’ দিয়ে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করা যায়। গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, ‘‘নতুন নাগরিকত্ব আইনের কথা যত শুনছি, ততই ভয় বাড়ছে। শুধু এই ভোটার কার্ডই তো আমাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ। পুরনো নথি কোথায়, কী ভাবে পাব?’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুরের ২২৭ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় ওপারে থেকে যায় ভারতের বেশ কিছু গ্রাম, কৃষিজমি, চা বাগান। সেই সময় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের এপারে নিয়ে আসা হলেও, গোয়ালপোখরে ওই গ্রামটি বেড়ার ওপারে থেকে গিয়েছে। গ্রামের আরও এক বাসিন্দা মহম্মদ সলিমউদ্দিন বলেন, ‘‘বেড়ার ওপারে আমাদের জমি নেই। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে ঘর দেওয়া হবে। কিন্ত জমি কে দেবে? গ্রামে আরও অনেকে ছিলেন। যাঁদের জমি ওপারে ছিল, তাঁরা চলে গিয়েছেন। আমার মতো অসহায় কয়েক জন থেকে গিয়েছি।’’

গোয়ালপোখরে তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য গোলাম রসুল বলেন, ‘‘ওই গ্রামের সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’

বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কড়াকড়ি থাকলেও গ্রামবাসীদের হয়রানি করা হয় না। বিপদে বিএসএফ ওই গ্রামের পাশে থাকে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গ্রামটি এপারে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Dinajpur Fulbari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE