গয়া মণ্ডল।
বছর পাঁচেক আগে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সেই থেকে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার পুরোপুরি আমার কাঁধে। ওদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি সংসার চালাতে হয় আমাকেই। তাই মালদহ জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির চত্বরে এই চায়ের দোকান শুরু করি। ভোর-রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দোকান চলে। তারপর বন্ধ রাখতে হয়। একবেলা দোকান করে কোনওরকমে টেনেটুনে সংসার চলছিল। এখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। লেখাপড়ার খরচও বেড়েছে। কিন্তু চায়ের দোকান থেকে আয় সে ভাবে বাড়েনি।
সংসার চালানো রীতিমতো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। বছর খানেক আগে একটি পথদুর্ঘটনায় বাঁ পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শারীরিক ভাবে কার্যত প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ি। অন্য কাজ করে যে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করব, শারীরিক অক্ষমতার জন্য সেটাও সম্ভব নয়। ভরসা সেই চায়ের দোকানই। কিন্তু কয়েক মাস ধরে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি আনাজপাতি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম যেভাবে বেড়েছে এবং সর্বোপরি সাধারণ ওষুধের দামও বেড়ে যাওয়ায় ছোট্ট চায়ের দোকান করে সংসার চালানো কি যে কষ্টকর হয়ে পড়েছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
দোকানে ছোট গ্যাসের সিলিন্ডারে চা করি। একমাস আগেও সেই সিলিন্ডারের দু’কেজি গ্যাস ভরতে নিত ১৭০ টাকা। কিন্তু চলতি মাসে সেই খরচ পড়ছে ২০০ টাকা। এক মাসের মধ্যে মাত্র দু’কেজি গ্যাসে ৩০ টাকা খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু চায়ের দাম বাড়ানো যায়নি, ৫টাকা কাপই বিক্রি করতে হয়। কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, ৮০০ টাকা কেজি হওয়ার পর থেকে খাসির মাংস খাওয়া ভুলে গিয়েছি। ব্রয়লার মুরগিও এখন ২৭০টাকা কেজি। দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই মাংসও খেতে পারছি না।
সস্তার বাটা মাছ আগে সপ্তাহে দু’দিন খেতাম কিন্তু রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে সর্ষের তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম হুহু করে বেড়ে যাওয়ায় এখন সপ্তাহে মাত্র একদিন বাড়িতে মাছ খাচ্ছি! বাকি দিন শাকান্ন বা ডাল ও আলু সেদ্ধ। পরিস্থিতি বুঝে ছেলেমেয়েরাও এই খাবার মানিয়ে নিচ্ছে। রেশনে যা সামগ্রী পাই তা মাত্র পাঁচ দিন চলে। নানা শারীরিক সমস্যার জন্য ওষুধ কিনতে হয়, কিন্তু সেই ওষুধের দামও বেড়ে গিয়েছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও সরকার কিছু করছে না, এটাই আশ্চর্যের। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে হয়তো আমাদের মতো পরিবারের একবেলা খেয়ে থাকতে হবে!
(লেখক মালদহের বাসিন্দা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy