Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বরফের স্বাদ শিলাবৃষ্টিতে মেটাল পাহাড়

পঞ্চাশ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে বরফ পড়ার অনুভূতি পাহাড়ে। টানা বৃষ্টিতে সাদা হয়ে যায় দার্জিলিঙের রাজপথ থেকে গলির রাস্তা। শিল জমে প্রায় ৬ ইঞ্চি পুরু স্তর জমে যায় রাস্তার ওপরে। চারদিক সাদা হয়ে যাওয়ায় অনেকেই তুষারপাত হয়েছে বলে দাবি করেন।

শিলাবৃষ্টির পরে এমন সাদা বরফেই ঢেকে গিয়েছিল শৈলশহর। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

শিলাবৃষ্টির পরে এমন সাদা বরফেই ঢেকে গিয়েছিল শৈলশহর। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

পঞ্চাশ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে বরফ পড়ার অনুভূতি পাহাড়ে। টানা বৃষ্টিতে সাদা হয়ে যায় দার্জিলিঙের রাজপথ থেকে গলির রাস্তা। শিল জমে প্রায় ৬ ইঞ্চি পুরু স্তর জমে যায় রাস্তার ওপরে। চারদিক সাদা হয়ে যাওয়ায় অনেকেই তুষারপাত হয়েছে বলে দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ হঠাৎই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয় দার্জিলিঙে। রাস্তায় প্রায় ৬ ইঞ্চি উচ্চতার শিলের স্তুপ জমে যায়। তুষারপাত হচ্ছে বলে চাউরও হয়ে যায়। পর্যটকদের অনেককেই শিল কুড়োতে অথবা সাদা হয়ে যাওয়া রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। তবে টানা পঞ্চাশ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে দার্জিলিঙের জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাস্তায় শিল বিছিয়ে থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক গাড়ি-বাস দাঁড়িয়ে থাকে। পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত রাস্তা সাফ করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

কলকাতা থেকে আসা পর্যটক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে এসে তুষারপাত দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আজ সারা দার্জিলিং জুড়ে শুভ্র শিল ছড়িয়ে থাকতে দেখে, চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে। তুষারপাত না দেখলেও, সাধ অনেকটাই পূরণ হয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ শর্মার দাবি, ‘‘প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি দেখেছি, ঝড়ে শতাধিক গাছ উপরে পড়তেও দেখেছি। কিন্তু আজকের মতো শিলাবৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। ঘণ্টাখানেক ধরে এত বিপুল পরিমাণে তুষারপাতও আগে দেখা যায়নি।’’

পাহাড়ে শিলাবৃষ্টির পরে দুর্যোগ শুরু হয় গোটা উত্তরবঙ্গে। দুপুরের পরে হঠাৎই শিলিগুড়ির আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। দুপুরেই যেন সন্ধ্যে নেমে আসে শহরে। শুরু হয় দমকা হাওয়া। হাওয়ার দাপটে শহরের বেশ কিছু হোর্ডিং, বোর্ড উড়ে যায়। ভোট প্রচারের ফেস্টুন ছিঁড়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ঝড়ের পরে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। তবে আধ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য বৃষ্টি কমে যায়। বিকেল নাগাদ জলপাইগুড়িতে শুরু হয় ঝড়-শিলাবৃষ্টি। ঝড়ে কোথাও ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে, কোথাও ভেঙে পড়েছে ছাদ। যদিও, পাহাড় বা সমতল কোথাও বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। আলিপুরের আবহাওয়া দফতর থেকে কয়েকদিন ধরেই উত্তরবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির পুর্বাভাস দিয়ে সর্তকতা জারি করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সিকিমেও দুর্যোগ চলছে। গত বুধবার থেকে টানা বৃষ্টি চলছে গ্যাংটক সহ লাগোয়া এলাকায়।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিহার লাগোয়া এলাকায় একটি ঘুর্ণাবর্তের অবস্থানের জেরেই উত্তরবঙ্গের আকাশে দুযোর্গ ঘনীভূত হয়। নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থানের কারণে গত সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হয়। সেই নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান বদলাতেই জুড়ে বসে একটি ঘূর্ণাবর্ত।

গত কয়েকদিন উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রাও ছিল বেশি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা বেশি থাকায় বাতাস অস্থির হয়েছিল। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পও ধেয়ে আসে উত্তরবঙ্গের আকাশে। সেই পরিস্থিতিতে একটি ঘুর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার কারণেই দুর্যোগ শুরু। একই কারণে সিকিমেও বিপর্যয় চলে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘গ্যাংটকে টানা বৃষ্টি চলছে। পূর্ব-পশ্চিম সিকিমের কিছু জায়গায় তুষারপাতও হয়। ’’ ঝড়বৃষ্টির জেরে বিঘ্নিত হয় শিলিগুড়ির ভোট প্রচার। শিলিগুড়িতে জোটের প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঝড়ের সময়ে আমি পার্টি অফিসেই ছিলাম। দুর্যোগের কারণে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মিছিল বাতিল করতে হয়েছে।’’

বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেব দাবি করেছেন, তাঁর কোনও কর্মসূচি ঝড়ের কারণে বাতিল হয়নি। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম।’’ ঝড়ের পরে অবশ্য বিকেলে রোদের দেখা মেলে শহরে। তারপরে ফের প্রচার শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

darjeeling hail storm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE