E-Paper

‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ পড়ে মনের জোর বাড়ে তাঁর 

ইংরেজবাজার শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনিতে ঋদ্ধিমার বাড়ি। বাবা রাজীব পাল পেশায় পুলিশকর্মী। তিনি মালদহ পুলিশ লাইনে কর্মরত।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৯:৫৭
বাড়িতে হুইল চেয়ারে বসে ঋদ্ধিমা পাল।

বাড়িতে হুইল চেয়ারে বসে ঋদ্ধিমা পাল। নিজস্ব চিত্র।

‘...এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি নিতে হবে তরী পার’। হুইল চেয়ারে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতার লাইন পাঠ করে চলেছেন ঋদ্ধিমা পাল। উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন তিনি। আচমকা নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতা কেন পড়ছেন? মালদহের ১ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির ঋদ্ধিমা বলেন, “দু’বছর বয়স থেকেই আমার সঙ্গী হুইল চেয়ার। চলাফেরা তো দূরের কথা, নিজের শরীরে মশা বসে থাকলেও ওড়ানোর ক্ষমতা নেই। তাই নিজের মনকে শক্ত করার জন্য মাঝে মধ্যেই কাণ্ডারী হুঁশিয়ার কবিতা পড়ি। আর তাতে আমার মনে জোর আসে।’’

মালদহ বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’-তে (এসএমএ) আক্রান্ত ঋদ্ধিমা। পরিবারের দাবি, ঋদ্ধিমা জিনের বিরল রোগে আক্রান্ত। তাঁর দুই বছর বয়স থেকে রোগটি ধরা পড়ে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৫২ নম্বর পেয়েছেন। বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯৭, অঙ্কে ৯৩, পদার্থ বিদ্যায় ৭৬, রসায়নে ৬৬, কম্পিউটার সায়েন্সে ৯৪ নম্বর পেয়েছেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের মতো সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষাতেও তিনি সফল হন। তাঁর ৪৬০ র‌্যাঙ্ক হয়েছে, দাবি পরিবারের। ঋদ্ধিমা বললেন, “ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।”

ইংরেজবাজার শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনিতে ঋদ্ধিমার বাড়ি। বাবা রাজীব পাল পেশায় পুলিশকর্মী। তিনি মালদহ পুলিশ লাইনে কর্মরত। মা অরুণিতা ঘর সামলান। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ঋদ্ধিমাই বড়। তিনি মাধ্যমিকেও ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল নম্বর পেয়েছেন।

মাধ্যমিকের সময় গোটা শরীরটা কুঁকড়ে গিয়েছিল। মেরুদণ্ড ক্রমশ নুয়ে পড়ে ফুসফুসে চাপ দেওয়ায় অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল বলে জানান ঋদ্ধিমার মা অরুণিতা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের মতো সারা দেশে প্রায় চারশোর বেশি মানুষ এসএমএতে আক্রান্ত। এই রোগটির চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে তা সামলানো খুব কঠিন। তবুও সবার সহযোগিতা পেয়ে মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।” মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা রাজীবও। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দফতরও মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করেছে। মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চায়। তবে অনেক বাধা আছে। আশা আছে, সে বাধা অতিক্রম করে ও সফল হবে।”

ঋদ্ধিমার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা দফতরও। উচ্চ মাধ্যমিকের মালদহ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়েন্দ্র পাঠক বলেন, “সংসদ পরীক্ষার সময় ঋদ্ধিমার পাশে ছিল। আগামী দিনেও তাঁর পাশে থাকবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 English Bazar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy