Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

Couple: ‘ওকে ভর্তি নিন’, স্ত্রীকে পড়াতে স্কুলে আর্জি স্বামীর

স্বামী নিজে স্কুলে এসে স্ত্রীকে পড়াতে অনুরোধ করছেন, এটা ব্যতিক্রমী বলেই দাবি ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের।

শুভেচ্ছা: ছাত্রীটির বাড়িতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

শুভেচ্ছা: ছাত্রীটির বাড়িতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫৯
Share: Save:

সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর, হাতে শাঁখা। ছাত্রীটিকে যেন চিনতেই পারছিলেন না শিক্ষকেরা। ছাত্রীটির সঙ্গে এসেছেন তাঁর স্বামীও। সবাই তাঁদের প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে পাঠালেন। সেখানে গিয়ে যুগলে জানালেন, গতবছর তাঁদের বিয়ে হয়েছে। তাই মাধ্যমিকের টেস্টে বসতে পারেননি নববিবাহিতা। এক বছর পরে সেই ছাত্রী তথা স্ত্রীকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন স্বামী। প্রধানশিক্ষকের কাছে তাঁর অনুরোধ, “এক বছর নষ্ট হলেও, এ বার আমার স্ত্রীকে মাধ্যমিকে বসার সুযোগ দিন।” স্বামীর অনুরোধে ছাত্রীটিকে স্কুলে ভর্তি করে নেয় স্কুল। সেই ছাত্রীই এ বার মাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। ছাত্রীর স্বামী চেন্নাইয়ে গিয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিতে। সেখান থেকেই স্কুলে ফোন করে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর স্ত্রী একাদশ শ্রেণিতেও ভর্তি হবেন।

জলপাইগুড়ির অরবিন্দ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা তাঁদের স্কুলে ব্যতিক্রমী ঘটনা। করোনাকালে একের পর এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা শোনার অভিজ্ঞতা রয়েছে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষেরই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের পর ছাত্রীরা স্কুলে আসছে না। সেখানে বিয়ের পর ছাত্রীর স্বামী নিজে স্কুলে এসে স্ত্রীকে পড়াতে অনুরোধ করছেন, এটা ব্যতিক্রমী বলেই দাবি ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের।

জলপাইগুড়ির পাতকাটায় বাড়ি রানি রাউতের। জন্মের সময়ে মা মারা যান। দিদা রাজকুমারী রাউত রানিকে বড় করে তোলেন। দিদাই স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। বাড়ির পাশেই পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র মেদিনীপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ মাহাতোর সঙ্গে সম্পর্ক, তার পর বিয়ে। বিয়ের জন্য মাধ্যমিকের টেস্টে বসতে পারেননি রানি। তাঁর কথায়, “বিয়ের পরে এক বছর পড়াশোনা প্রায় বন্ধই ছিল। প্রসেনজিৎই জোর করে আবার স্কুলে ভর্তি করিয়েছে।” রানির মামা রঞ্জিতের কথায়, “রানি মাধ্যমিক পাশ করার পরে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াতে তোড়জোর শুরু করেছে জামাই।”

এ ঘটনায় আপ্লুত স্কুল কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীটির যাতে একাদশে ভর্তি হতে পারেন, সেটা নিশ্চত করতে রানির বাড়ি গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক ক্ষৌণীশ গুহ। বললেন, “বিয়ের পরে স্বামী হাত ধরে স্ত্রীকে স্কুলে নিয়ে এসে ভর্তি করে দিয়েছে, এমন ঘটনা দ্বিতীয়টি আর পাইনি। তাই ছাত্রীটিকে নিয়ে আমাদেরও গর্ব হচ্ছে।”

ফোনে প্রসেনজিৎ বললেন, “রানি প্রথমে পড়তে রাজি ছিল না অতটা। আমি ওকে বুঝিয়েছি। কেন মেয়েদের পড়াশোনা করা উচিত তাও বুঝিয়েছি। পড়াশোনা করলে শুধু ডিগ্রি নয়, সমাজে ভাল ভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষা পাওয়া যায়, তা বুঝিয়েছি। সব শোনার পর ও পড়া শুরু করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE