Advertisement
E-Paper

হাতের জোরেই সিরাপ ‘পাচার’ ও পারে

সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, গরুর মতো নেশার সিরাপ পাচারেও ‘সাপ্লাই চেন’ কাজ করে। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশার মতো রাজ্য থেকে সড়ক কিংবা রেলপথে মালদহে নেশার সিরাপের বোতল মজুত করা হয়।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৩৩
হবিবপুরের সুখনগর গ্রামে সীমান্ত-রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

হবিবপুরের সুখনগর গ্রামে সীমান্ত-রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

সবই ‘হাতের খেলা’! মালদহের কালিয়াচক থেকে হবিবপুর কিংবা বৈষ্ণবনগর, মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামে কান পাতলেই স্পষ্ট হবে সে কারবারের রকমসকম। কালিয়াচকের চরি অনন্তপুরের এক বাসিন্দা বলেন, “হাতের জোরের উপরে ভর করেই সীমান্তে এখন ‘নেশার’ সিরাপ পাচারের রমরমা কারবার। আঁধার নামলেই ইট, পাটকেলের মতো এ-পার থেকে কাঁটাতার বেড়ার ও-পারে ছুড়ে দেওয়া হয় নিষিদ্ধ কাফ সিরাপের বোতল। বোতলগুলো প্লাস্টিকের। ফেলা হয় ধানজমির নরম মাটি তাক করে। আর ও-পারের মাটি ছুঁলেই ১২০ টাকা দামের সিরাপের বোতলের দাম হয়ে যায় দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। কারণ, সে সিরাপ পান করে নেশা করেন অনেকে।”

সে কথা মানতে নারাজ বিএসএফের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর হুডা। তিনি বলেন, “আমরা নিষিদ্ধ সিরাপের অনেক বোতল উদ্ধার করছি। সীমান্তে জওয়ানেরা সক্রিয় রয়েছেন। শীতের মরসুমে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএসএফ আধিকারিকের দাবি, ‘‘বহু দূর থেকে এ ভাবে গায়ের জোরে বোতল ছুড়ে পাচার করা হলে, তা ধরা কঠিন।’’

সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, গরুর মতো নেশার সিরাপ পাচারেও ‘সাপ্লাই চেন’ কাজ করে। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশার মতো রাজ্য থেকে সড়ক কিংবা রেলপথে মালদহে নেশার সিরাপের বোতল মজুত করা হয়। আগে ট্রাকে করে সিরাপের বোতল আসত। পুলিশ, গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে এখন ছোট ছোট ভাগে সিরাপের বোতল জেলায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দামের নেশার সিরাপ ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা দামে কিনে নেয় ডিলারেরা। ডিলারদের কাছ থেকে আবার সাব-ডিলারেরা বোতল পিছু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে কিনে নেয়। এর পরে, কালিয়াচকের চরি অনন্তপুর, শব্দলপুর, মহব্বতপুর, দুইশত বিঘি, শ্মশানি, মিলিক সুলতানপুর, বৈষ্ণবনগরের দৌলতপুর, কুম্ভীরা, হবিবপুরের ঋষিপুর, আইহোর মতো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামে নিয়ে আসে ‘ক্যারিয়ার বয়’রা। আঁধার নামলেই ওই গ্রামগুলি থেকে ‘থ্রো-ম্যান’-এর মাধ্যমে নেশার সিরাপ পৌঁছে যায় ও-পার বাংলায়।

কারা এই ‘থ্রো-ম্যান’, ‘ক্যারিয়ার-বয়’? গ্রামবাসীদের কথায়, সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে নেশার সিরাপ পৌঁছনোর দায়িত্ব থাকে ‘ক্যারিয়ার বয়’-দের। ১০০ বোতল পৌঁছলে, তাঁদের হাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর পরে, রাতের অন্ধকারের সুযোগে বিএসএফের মাথার উপর দিয়ে বাঁশ বাগান, বাড়ির ছাদে বসে সিরাপের বোতল ছুড়ে দেওয়ার কাজ ‘থ্রো-ম্যান’দের। তাঁদেরও ১০০ বোতলের জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়।

এক ক্যারিয়ার বয় বলেন, “আমাদের মাথার উপরে সাব-ডিলার, ডিলার, সরবরাহকারীরা রয়েছে। সাব-ডিলারদের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ। এখানেও থানা, বিএসএফ, প্রভাবশালীদের সঙ্গে রফা করতে উপরওয়ালার হাত লাগে।” তাঁর সংযোজন, “গরুর থেকে নেশার সিরাপ পাচারে ঝুঁকি অনেক কম। গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এখন নেশার সিরাপের দিকে ঝুঁকছে। কারণ, কাঁটাতার বেড়া থাকলেও হাতের জোরে ছুড়ে নেশার সিরাপের ও পারে পাঠানো যায়।”

জেলা পুলিশের দাবি, তাদের নজরদারির কড়াকড়ির দৌলতে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ পাচারের কারবারে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সীমান্তে নজরদারির দায়িত্ব বিএসএফের। আমাদের তরফে নজরদারিতে ঘাটতি নিই।’’

এক বিএসএফ কর্তার দাবি, “কাঁটাতারের বেড়ার পাশে প্রচুর চাষের জমি রয়েছে। চোরা কারবারিরা অনেক সময় চাষি সেজে গামছায় পুঁটলি করে একেবারে কাঁটাতারের বেড়ার ধার ঘেঁষে নেশার সিরাপের বোতল রেখে চলে যায়। পরে, বাংলাদেশের কারবারিরা নিজেদের সুযোগ মতো তা সংগ্রহ করে নেয়। সেটা আমাদের পক্ষে ধরা মুশকিল। তবে জওয়ানরা তৎপর রয়েছে।”

Cough Syrup Racket Illegal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy