Advertisement
১১ মে ২০২৪

নির্দল হয়েও নির্ধারক রথুদা ও শম্পাবৌদি

ফল ঘোষণা হতেই ফুলের মালা, গোলাপি আবিরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতলেন অনুগামীরা। কেউ হাত মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, কেউ আবার ‘প্রিয়’ রথুদার জয়ে মিষ্টি বিতরণ শুরু করলেন। ম্যাগাজিন রোড এক্সটেনশন এলাকায় আবার একজন রীতিমতো বালতি ভরে সরবত তৈরি করে বিলি করলেন। শহরের হাজরাপাড়া লাগোয়া এলাকায় রাস্তাঘাট ততক্ষণে হলুদ আবিরে ঢাকা পড়েছে।

নির্দল প্রার্থী শম্পা রায়কে ঘিরে উল্লাস।

নির্দল প্রার্থী শম্পা রায়কে ঘিরে উল্লাস।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

ফল ঘোষণা হতেই ফুলের মালা, গোলাপি আবিরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতলেন অনুগামীরা। কেউ হাত মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, কেউ আবার ‘প্রিয়’ রথুদার জয়ে মিষ্টি বিতরণ শুরু করলেন। ম্যাগাজিন রোড এক্সটেনশন এলাকায় আবার একজন রীতিমতো বালতি ভরে সরবত তৈরি করে বিলি করলেন। শহরের হাজরাপাড়া লাগোয়া এলাকায় রাস্তাঘাট ততক্ষণে হলুদ আবিরে ঢাকা পড়েছে। নানা বয়সের বাসিন্দাদের ঘেরাটোপে রীতিমতো শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন এক সাধারণ বধূ। সকলের কাছে যিনি এই কয়েকদিনে হয়ে উঠেছেন শম্পাবৌদি।। কোচবিহার পুরসভার ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী দুই নির্দল প্রার্থী যথাক্রমে গৌতম বড়ুয়া (রথুদা) ও শম্পা রায়কে নিয়ে এ ভাবেই উৎসবে মাতলেন এলাকার বাসিন্দারা।

শাসক তৃণমূল ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের হারিয়ে সূর্য প্রতীকে জিতেছেন তাঁরা। পুরসভার বোর্ড গঠনেও ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছেন। রাজার শহর কোচবিহারের রাজনীতিও ওই ‘জোড়া সূর্যোদয়’ নিয়ে এখন আলোড়ন।

দলীয় সূত্রের খবর, ২০ আসনের ওই পুরসভায় তৃণমূল এককভাবে ১০টি, বামফ্রন্ট ৮টি ও নির্দলরা ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। ফলে পুরবোর্ড গঠনের ‘ম্যাজিক সংখ্যায়’ পৌঁচ্ছতে নির্দলরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন ইতিমধ্যে নির্দলদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়ার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করেছে তৃণমূল। রাজ্য নেতৃত্বের ‘সবুজ সঙ্কেত’ পেলে আলোচনা শুরু হবে। সতর্ক নজর রাখছে বামেরাও। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমরা এককভাবে ১০টি আসন পেয়েছি। ফলে বোর্ড করার সুযোগ পাব। নির্দলদের ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। রাজ্য নেতৃত্বের যা নির্দেশ দেবেন সেটা মেনে পদক্ষেপ করা হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “নীতি ও কর্মসূচি মেনে কোনও দল বা কিছু লোক ঐক্যমত হলে বোর্ড গঠনের পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। সবটাই লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।” নির্দল প্রার্থীরা অবশ্য জানিয়েছেন, বোর্ড গঠনে তাঁদের ভূমিকা ঠিক করবেন বাসিন্দারাই। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী গৌতম বড়ুয়া বলেন, “ নাগরিক কনভেনশন করে বোর্ড গঠনের ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শম্পা রায় বলেন, “বাসিন্দারাই পদক্ষেপ ঠিক করবেন।”

গৌতম বড়ুয়াকে ঘিরে উল্লাস।

কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোচবিহারে প্রার্থী হন বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর গৌতম বড়ুয়া ও প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর উত্তম রায়ের আত্মীয়া শম্পা রায়? তাঁদের জয়ের রসায়নই বা কী? রাজনৈতিক মহলের খবর, গত ভোটেও কংগ্রেসের টিকিটে ওই আসনে জেতেন গৌতমবাবু। বীরেন কুণ্ডু চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এ বারে তাঁর বদলে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে তৃণমূলের টিকিট পান প্রবাল গোস্বামী। অন্যদিকে প্রয়াত বীরেন কুণ্ডুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর উত্তম রায়ও বছরখানেক আগে তৃণমূলে যান। উত্তমবাবুর দাবি, “তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় ওয়ার্ডের প্রার্থী আমাদের লোক হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। তিন মাস আগে বুঝতে পারি ওই কথা রাখা হবে না। সর্বস্তরের মানুষের আশীর্ব্বাদেই বৌদি এমন জয় পেয়েছেন।” গৌতম বড়ুয়া বলেন, “বীরেনবাবুর অবর্তমানে নির্দল হয়ে এ বারের লড়াই অনেক কঠিন ছিল।” ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী তথা দলের যুব সংগঠনের জেলা কার্যকরী সভাপতি রানা বসু অবশ্য বলেন, “অন্তর্ঘাত না হলে দলীয় প্রার্থীই নিশ্চিত জিততেন।”

দলীয় সূত্রের খবর, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গৌতম বড়ুয়া তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামফ্রন্টের মলয় রায়বসুনীয়কে ৭০ ভোটে হারিয়েছেন। গৌতমবাবু ৪৮১টি , মলয়বাবু ৪১১টি , তৃণমূলের প্রবাল গোস্বামী ৩৮০টি, বিজেপির রাজীব নারায়ণ ৩৬৫টি ভোট পেয়েছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২১৪ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের অন্তরা বসুকে (৬৪২) হারিয়েছেন শম্পা রায় (৮৫৬)। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী গোবিন্দ সাহা (২৩৯) হেরেছেন। বামফ্রন্টের মহানন্দ সাহা ১৩৩৩ ভোট পেয়ে জিতেছেন।

তুফানগঞ্জ পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের শহর সভাপতি হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (৩৫৮) সিপিএমের প্রশান্ত পালের(৪৭৯) কাছে পরাজিত হয়েছেন। মাথভাঙা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির দিলীপ মণ্ডল জিতেছেন। তৃণমূলের চন্দন দাস ৪ নম্বর ওয়ার্ডে, বিদায়ী সিপিএম চেয়ারম্যান কোকিলা সিংহরায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন। ১১ নম্বরে হেরেছেন ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ চৌধুরী। তুফানগঞ্জে তৃণমূলের কুন্তলা অধিকারীর কাছে চার শতাধিক ভোটে হেরেছেন বিদায়ী সিপিএম চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল। দিনহাটা পুরসভায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ ৪৭০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬৮ ভোটে হেরেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক অশোক মণ্ডল।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE