শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন জখমরা। — নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ের ঢালে গাড়ি নিউট্রালে দাঁড় করানো ছিল। চালক ব্রেকে পা রেখে বসেছিলেন ছাড়বেন বলে। মন্দির দেখে ফিরে পর্যটক দলটি উঠে পড়েছিলেন গাড়িতে। তবে দলে থাকা ১৩ বছরের কিশোর অগ্নিজ পাল তখনও ওঠেনি। গাড়ির পিছনের সিটে বসতে দরজা খোলার চেষ্টা করছিল। দরজা খুলতে সমস্যা হচ্ছে বলে আচমকা চালক নেমে পড়েন তা দেখতে। মূহূর্তে গাড়ি গড়িয়ে খাদে উল্টে পড়ে। শনিবার শিলিগুড়ির দুই মাইলে একটি নার্সিংহোমে শুনে সে কথাই বলছিলেন পর্যটন দলের সদস্য শবরী দে। তাঁর চোখে মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি ওই ভাবে নিউট্রালে রেখে চালক নেমে না পড়লে এই ঘটনা ঘটত না।’’
শুক্রবার দুপুরে নামচিতে বৌদ্ধ মন্দির দেখে গিয়ে ওই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন কলকাতা ও হুগলি থেকে আসা পিনাকী অধিকারী, শবরী দে-সহ আরও ৯ জন। শনিবার ভোরে নামচি থেকে শিলিগুড়ির ওই নার্সিংহোমে আনা হয় জখমদের সাত জনকে। পাঁচ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়া হলেও ভর্তি রয়েছেন পিনাকীবাবু এবং তাঁর মাসি শবরী দে। কোন্নগরের বাসিন্দা শবরীদেবীর ডানদিকের চোখে চোট রয়েছে। শবরীদেবী জানান, খাদে উল্টে গেলে গাড়ির ভিতরেই সবার নীচে চাপা পড়ে যান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘জ্ঞান ছিল, কিন্তু কিছু করার ছিল না। ডান চোখের উপর চেপে বসেছিল একটা ব্যাগ।’’ পরে তাঁদের চিৎকার শুনে লোকজন গিয়ে উদ্ধার করে নামচি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পিনাকীবাবুর স্ত্রীকে সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয়। শিলিগুড়ির নার্সিংহোমের চিকিৎসক শৈলজা গুপ্ত জানান, ‘‘পিনাকীবাবু বুকের পাঁজরে চোট রয়েছে। হাতের একাংশে রক্ত জমে রয়েছে। শবরীদেবীর চোট তেমন গুরুতর নয়।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আরপিএফ কর্মী পিনাকীবাবু জলপাইগুড়িতে কর্মরত। ঘুরতে এসে স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর পরিচিত। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘এ দিন কালিম্পংয়ের পরিবহণ আধিকারিক জখমদের শিলিগুড়িতে ওই নার্সিংহোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিন জন এখনও নামচি হাসপাতালেই রয়েছেন।’’
এ দিনে এক দিন পরেই ফের দুর্ঘটনায় জখম হলেন পর্যটকেরা। শনিবার শিলিগুড়ির অদূরে রোহিনীর কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ছোট গাড়ি গাছে ধাক্কা মারলে পাঁচজন পর্যটক জখম হন। জখমদের মধ্যে চার জন মহিলা। জখম হয়েছেন গাড়ির চালকও। জখমদের প্রথম সুকনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে সেখান থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাত থেকে পাঁচজন পর্যটকের দলটি ঘুরতে এসেছেন। গ্যাংটক এবং দার্জিলিং ঘুরে এ দিন তারা নামছিলেন।
জখমদের দেখতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে যান রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘জখম মহিলাদের একজনের মাথায় চোট গুরুতর। আরেকজনের হাত, পা ভঙেছে। চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ গাড়ির চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দার্জিলিং পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘জখমদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy