Advertisement
E-Paper

বাধা ডিঙিয়ে নিজের স্কুলে সেরা জ্যোৎস্না

একটাই ঘর। সেখানেই টিভি দেখা, পড়াশোনা এবং‌ শোওয়া। ভাই কার্টুন দেখলে অথবা মায়ের সিরিয়াল শুরু হলে বই নিয়ে টিভির উল্টো দিকে ঘুরে বসা ছাড়া উপায় ছিল না। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ‘নোট বই’ কেনা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে পড়ার সময়ে কোনও বিষয়ে আটকে গেলে, পরদিন স্কুলে গিয়ে জানা ছাড়াও উপায় ছিল না। মা-বাবার কেউই স্কুলে যায়নি। তবে নিজের স্কুলে জ্যোৎস্না-ই মাধ্যমিকে সেরা।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:০৪
জ্যোৎস্না দাস। —নিজস্ব চিত্র।

জ্যোৎস্না দাস। —নিজস্ব চিত্র।

একটাই ঘর। সেখানেই টিভি দেখা, পড়াশোনা এবং‌ শোওয়া। ভাই কার্টুন দেখলে অথবা মায়ের সিরিয়াল শুরু হলে বই নিয়ে টিভির উল্টো দিকে ঘুরে বসা ছাড়া উপায় ছিল না। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ‘নোট বই’ কেনা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে পড়ার সময়ে কোনও বিষয়ে আটকে গেলে, পরদিন স্কুলে গিয়ে জানা ছাড়াও উপায় ছিল না। মা-বাবার কেউই স্কুলে যায়নি। তবে নিজের স্কুলে জ্যোৎস্না-ই মাধ্যমিকে সেরা।

শিলিগুড়ির দুর্গানগরের বাসিন্দা নিখিল দাস গ্যারেজে গাড়ি রং করার কাজ করেন। মা বুলবুলিদেবী গৃহবধূ। নিখিলবাবু জানালেন, প্রতিদিন কাজ মেলে না। কোনও কোনও মাসে ৫ হাজার টাকা ঘরে আনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। পৈতৃক একচালা বাড়িটা অন্য ভাইদের মধ্যে ভাগ হয়েছে। নিজের ভাগে একটি ঘরে চার জনে ঠাসাঠাসি হলেও, ঘর বাড়াতে পারেননি। তবে প্রথম শ্রেণি থেকেই মেয়ে জ্যোৎস্না স্কুলে প্রথম হয়ে আসায়, ওর পড়াশোনা নিয়ে কোনদিন কার্পণ্য করেননি। মেয়ের বই-খাতা কেনার জন্য ধারদেনাও করেছেন। আবার, বাবার কষ্টের কথা ভেবে মেয়েও বইয়ের জন্য বেশি জোরাজুরি করেননি বলে জানালেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে হায়দারপাড়া বুদ্ধ ভারতী স্কুলে মার্কশিট নিতে জ্যোৎস্নার সঙ্গেই এসেছিলেন নিখিলবাবু। বললেন, ‘‘নিজে পড়াশোনা করিনি। কিন্তু মেয়ে বছর বছর ফার্স্ট হচ্ছে। ও যতদূর পড়তে চায়, পড়বে। যত কষ্টই হোক, টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করব।’’

অষ্টম শ্রেণিতে একবার তৃতীয় হয়েছিল জ্যোৎস্না, বাকি ক্লাসগুলিতে প্রথম। মাধ্যমিকে ৫৩৪ পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞানে পেয়েছে সবচেয়ে বেশি নম্বর। ৯৭। বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে বেশি নম্বর পেলেও, কলা নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিকে পড়বে বলে জানাল জ্যোৎস্না। বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে বিরাট কোহেলির ভক্ত জ্যোৎস্নার। টিভি দেখার থেকেও গল্পের বই পড়া বেশি পছন্দ করলেও, জ্যোৎস্না দেবের সিনেমার ভক্ত। পড়ার বইয়ের সঙ্গেই রাখে সুকুমার রায়ের আবোল-তাবোল। নিখিলবাবুর আক্ষেপ, ‘‘মেয়েটা বই পড়তে খুব ভালবাসে, কিন্তু পড়ার বই কেনাই সমস্যা, গল্পের বইও কিনে দিতে পারি না। এর ওর থেকে চেয়ে নিয়ে আসে।’’

স্কুলের শিক্ষক ছাড়াও তিন জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শিখতে যেত জ্যোৎস্না। তাঁরাও পরিবারের অভাবে কথা জেনে টিউশন ফি নিতেন না। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জন্য বই সহ অন্য সাহায্য করার কথা দিয়েছেন বুদ্ধ ভারতী স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ নেই। তবে আমি ওর টিউশন ফি সহ বইয়ের বিষয়ে সাহায্য করব।’’ স্কুলের শিক্ষকরাও সকলে জ্যোৎস্নাকে নানা সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষকদের কথা বারবার ঘুরে এসেছে জ্যোৎস্নার কথাতেও।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ভাইয়ের পড়াশোনা দেখার ভারও জ্যোৎস্নার উপরে। এ দিন স্কুলে দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘স্যাররা সাহায্য না করলে হয়ত পড়াশোনাই করতে পারতাম না। শুনেছি উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের অনেক দাম। জানি না কী হবে।’’

anirban roy jyotsna das madhyamik topper jyotsna siliguri madhyamik topper jyotsna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy