Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইস্ত্রির প্যান্টে ৩০ হাজার টাকা, ফেরত দিলেন লন্ড্রি ব্যবসায়ী

রমেশবাবুর কথায়, ‘‘দোকানের মেঝেতে এত টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকেই কার টাকা তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে অশোকদাকে টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ অশোকবাবু বলেন, ‘‘রমেশের সততার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।’’

নজির: দোকানে রমেশ রজক। নিজস্ব চিত্র

নজির: দোকানে রমেশ রজক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ১১:০৬
Share: Save:

দোকানের মেঝেয় কুড়িয়ে পাওয়া ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিলেন রায়গঞ্জের কুমারডাঙি এলাকার এক লন্ড্রি ব্যবসায়ী রমেশ রজক। শনিবার দুপুরে উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে রমেশ রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকার বাসিন্দা অশোক ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে ওই টাকা ফিরিয়ে দেন। কুমারডাঙি এলাকার সরকারি নিকাশিনালার উপরে টিনের তৈরি একচিলতে দোকান রয়েছে রমেশের। সেখানেই পোশাক ইস্ত্রি করার কাজ করেন তিনি। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর জোগাড়। তার পরেও তাঁর সততার নজিরে অবাক বাসিন্দারা।

স্থানীয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর হিমাদ্রী সরকারের বক্তব্য, ‘‘অভাব ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও রমেশ টাকা ফিরিয়ে গিয়ে যে সততা দেখিয়েছেন, তার জন্য ওয়ার্ডের সমস্ত বাসিন্দা গর্বিত ও অনুপ্রাণিত।’’

রমেশের স্ত্রী মীরা গৃহবধূ। দুই ছেলে সাহিল ও সানি চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। এক মেয়ে মিষ্টি প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। রমেশের দাবি, শুক্রবার দুপুরে তিনি দোকানের মেঝেয় রবার দিয়ে মোড়ানো দুহাজার টাকার একটি বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখেন। ১৫টি দু’হাজার টাকার নোট ছিল। ইস্ত্রি করার আগে কারও জামা বা প্যান্ট ঝাড়ার সময়ে পকেট থেকে ওই টাকা পড়ে গিয়েছে নিশ্চিত হয়ে তিনি টাকার বান্ডিলটি সরিয়ে রাখেন। বিষয়টি তিনি তাঁর পাশের দোকানের স্টেশনারি ব্যবসায়ী তথা সঙ্গীত শিক্ষক জয়ন্ত রায়চৌধুরীকে জানান।

রমেশবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি পোশাক ইস্ত্রি করি। তাই ঠিক কোন পোশাক থেকে টাকার বান্ডিলটি পড়েছে, তা বুঝতে পারিনি। আমার দোকানের বেশির ভাগ খদ্দেরকেই জয়ন্তদা চেনেন। তাই তাঁকে বিষয়টি জানিয়ে রাখি।’’

জয়ন্তবাবুর দাবি, শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ অশোকবাবু তাঁকে ফোন করে জানান, ওই লন্ড্রিতে ইস্ত্রি করতে দেওয়া তাঁর একটি প্যান্টের পকেটে ভুল করে ৩০ হাজার টাকা চলে গিয়েছে। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘আমি তাঁকে টাকা পাওয়ার বিষয়টি না জানিয়ে এ দিন সকালে দোকানে আসতে বলি। এ দিন তিনি দোকানে এলে তাঁর কাছে টাকা মোড়ানোর রবারের রং ও ক’টি ২০০০ টাকার নোট ছিল, তা জানতে চাই। তিনি সঠিক জবাব দেওয়ায় এর পর রমেশ তাঁর হাতে টাকা ফিরিয়ে দেন।’’

রমেশবাবুর কথায়, ‘‘দোকানের মেঝেতে এত টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকেই কার টাকা তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে অশোকদাকে টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’

অশোকবাবু বলেন, ‘‘রমেশের সততার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE