Advertisement
E-Paper

রায়গঞ্জের চিঠি

১৯৯০ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। শ্রীপুর মহিলা ও খাদি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদিকা হিসেবে আমাকে সংগঠনের সেবামূলক বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য প্রতিদিনই উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। বর্তমানে জেলার ইটাহার, করণদিঘি ও কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে সংগঠনের তরফে বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জীবিকা সহ নারী ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতার কাজ চলছে।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০২:১৪
প্রতীক্ষালয় নেই। তাই দাঁড়াতে হয় দোকানের শেডেই। ছবি: গৌর আচার্য।

প্রতীক্ষালয় নেই। তাই দাঁড়াতে হয় দোকানের শেডেই। ছবি: গৌর আচার্য।

প্রতিটি বাসস্টপে চাই প্রতীক্ষালয়

১৯৯০ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। শ্রীপুর মহিলা ও খাদি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদিকা হিসেবে আমাকে সংগঠনের সেবামূলক বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য প্রতিদিনই উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। বর্তমানে জেলার ইটাহার, করণদিঘি ও কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে সংগঠনের তরফে বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জীবিকা সহ নারী ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতার কাজ চলছে। তাই সপ্তাহে প্রতিদিনই আমাকে কোনওদিন ইটাহার আবার কোনওদিন করণদিঘি বা কালিয়াগঞ্জে যেতে হয়। সংগঠনের অন্য মহিলা সদস্যারাও আমার সঙ্গে যান। ইটাহার যেতে হলে বিদ্রোহীমোড় বাসস্টপ থেকে আমরা গাড়ি ধরি। করণদিঘি বা কালিয়াগঞ্জে যেতে হলে পুরবাসস্ট্যান্ড মোড়, মোহনবাটি, সুপারমার্কেট বা শিলিগুড়িমোড় বাসস্টপ থেকে গাড়ি ধরতে হয়। দুঃখের বিষয় শহরের সবকটি বাসস্টপে যাত্রী পরিষেবা বলতে কিছুই নেই। যাত্রী প্রতীক্ষালয় না থাকায় আমাদের প্রচণ্ড গরমে চড়া রোদে ও বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে গরমের সময়ে যাত্রীদের গলধঘর্ম ও বৃষ্টি হলে যাত্রীদের কাকভেজা হতে হয়। তাই অনেক নিত্যযাত্রীর সারা বছরের সঙ্গী ছাতা। কিন্তু সেই ছাতায় রোদ আটকানো গেলেও ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সময়ে তা কোনও কাজে লাগে না। পুরসভা ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শিলিগুড়ি মোড় ও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসস্টপে দুটি শৌচাগার হয়েছে। সেগুলি বাদ দিয়ে শহরের বাকি বাসস্টপগুলিতে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য কোনও শৌচাগার ও পানীয় জলের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ফলে বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েন। সন্ধের পরে মহিলা যাত্রীরা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময়ে নিরাপত্তার অভাববোধ করেন। ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে। সেইসঙ্গে, বেপরোয়া মোটরবাইকের ধাক্কায় যে কোনও সময়ে যাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। প্রশাসনিক আধিকারিক, রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী ও জন প্রতিনিধিরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিজস্ব ও সরকারি গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ান। তাই তাঁদের নিত্যযাত্রীদের সমস্যা ও দুর্ভোগ বোঝার মতো পরিস্থিতি তৈরি এখনও তৈরি হয়নি। তাঁদের কাছে নিত্যযাত্রীদের তরফে আমার অনুরোধ, দয়া করে আপনারা শহরের প্রতিটি বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করার ব্যবস্থা করুন।

জবা ভট্টাচার্য, সম্পাদিকা, শ্রীপুর মহিলা ও খাদি উন্নয়ন সমিতি, বীরনগর, রায়গঞ্জ

আমি ২০০৫ সাল থেকে কালিয়াগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছি। তাই নিত্যযাত্রীদের দুর্দশা ও কষ্টের কথা আমার চাইতে অনেকেই কম জানেন। আশ্চর্যের বিষয় রায়গঞ্জ জেলা সদরের স্বীকৃতি পাওয়া দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও শহরের কসবা, দেবীনগর কালীবাড়ি, রাসবিহারী মার্কেট, বিদ্রোহীমোড়, পুরবাসস্ট্যান্ড মোড়, মোহনবাটি, সুপারমার্কেট, শিলিগুড়িমোড়, হাসপাতাল রোড ও জেলখানা মোড় বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়নি। মোহনবাটী ও শিলিগুড়ি মোড় এলাকার দুটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় রাস্তা চওড়া করার কাজের জন্য প্রশাসন প্রায় দেড় দশক আগে ভেঙে দিয়েছে। আমার বক্তব্য, কলকাতায় সাংসদ ও বিধায়করা নিজেদের তহবিলের টাকা বরাদ্দ করে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করেছেন। তেমনই সরকারি উদ্যোগে শিলিগুড়িতেও একাধিক যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়েছে। তাহলে একইভাবে রায়গঞ্জে কেন যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি হবে না? মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও বৃক্ষরোধনের জেরে বর্তমানে আবহাওয়ার অনেক বদল হয়েছে। শহরের কোনও বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় না থাকায় রোদে ও বৃষ্টিতে নিত্যযাত্রীদের অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়ে। যেহেতু যাত্রীরা রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন, তাই বাতাসে উড়ে বেড়ানো অদৃশ্য জীবাণু, ধুলোবালি ও গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া যাত্রীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অনেকেরই শ্বাসকষ্ট হয়। পুরসভা শিলিগুড়িমোড় বাসস্টপে শৌচাগার ও পানীয় জলের পরিকাঠামো তৈরি করে প্রশংসার কাজ করেছে। কিন্তু বাকি বাসস্টপগুলিতে শৌচাগার ও পানীয় জলের কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। ফলে মহিলা যাত্রীদের মাঝেমধ্যেই সমস্যা হচ্ছে। পুরুষ যাত্রীরা বাসস্টপ সংলগ্ন যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন বাসস্টপ সংলগ্ন এলাকার রাস্তার দু’ধারের জায়গা বেআইনিভাবে জবরদখল হয়ে গিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সেই সব দখল উচ্ছেদ করে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা সম্ভব। আরেকটা বিষয় হল, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা রোদ-বৃষ্টিটে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন। তাঁদের সমস্যার কি কোনওদিন সমাধান হবে না? তাই শহরের সমস্ত বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয়, পানীয় জল ও শৌচাগারের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পুরসভা, জন প্রতিনিধি, প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের সমানভাবে এগিয়ে আসা দরকার।

পীযূষ দাস, অধ্যক্ষ, কালিয়াগঞ্জ কলেজ, উকিলপাড়া, রায়গঞ্জ

Letter of Raiganj Raiganj birnagar sreepur siliguri debinagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy