গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাহাড়ের সরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমেও বাংলা বাধ্যতামূলক, এমন কোনও ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়নি। এমনকী, নতুন শিক্ষা বিল আনা হলে পাহাড়ে তা শিথিল হবে বলে সরকারি তরফে ইঙ্গিতও মিলেছে। কিন্তু, জোর করে বাংলা চাপানোর আশঙ্কা থেকেই ভরা পর্যটন মরসুমে দার্জিলিং পাহাড়ে আন্দোলনের হুমকি দিলেন বিমল গুরুঙ্গ। আগামীকাল ১ জুন থেকে টানা দু’দিন পাহাড়ের স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ফতোয়া দিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। তার পরে ৪ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত পাহাড়ে মিটিং-মিছিল করে প্রতিবাদ দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মোর্চা সভাপতি।
এই মুহূর্তে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়ে কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। উপরন্তু, আগামী ৮ জুন দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে পাহাড়ে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হলে কড়া আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সরকারি সূত্রের খবর, পর্যটক বোঝাই পাহাড়ে বিন্দুমাত্র অশান্তির চেষ্টা হলে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাহাড়ের মোর্চা বিরোধীরা অনেকেরই ধারণা, পুরসভায় বিরোধীরা প্রচুর ভোট পাওয়ায় শঙ্কিত মোর্চা নেতৃত্ব। তাই মিরিকে তৃণমূল পুরবোর্ড গঠনের ২৪ ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার পাহাড়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে একটি বৈঠকে ওই ফতোয়া দিয়েছেন গুরুঙ্গ। মোর্চা সূত্রের খবর, স্রেফ আশঙ্কার ভিত্তিতে ধর্মঘট করাটা কতটা ঠিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। কিন্তু, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘এখনও বিধানসভায় বিল পেশ না হলেও রাজ্য পাহাড়েও জোর করে বাংলা চাপাতে চাইছে বলে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে। প্রতিবাদে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পর্যটকদের কোনও হয়রানি করা হবে না।’’ দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সি দাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা পড়ানোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকাই জারি হয়নি। তা ছাড়া এ ভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ করার ফতোয়া দেওয়াটা বেআইনি। সরকারি তরফে আইনি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’ আজ, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার ও অমিত জাভালগি ও জেলাশাসক যৌথভাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন জন আন্দোলন পার্টি (জাপ), জিএনএলএফ, গোর্খা লিগও। জাপের সভাপতি হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, ‘‘বাংলা চাপানোর এমন কোনও ঘোষণাই হয়নি। তা ছাড়া মোর্চা তো জিটিএ চালাচ্ছে। শিক্ষা তো জিটিএ-এর অধীন। তেমন হলে জিটিএ সভা ডেকে সিদ্ধান্ত পাস করিয়ে রাজ্যকে পাঠালেই তো সমস্যা চুকে যাবে। কিন্তু তা না করে, এটা নিয়ে গ্রীষ্মের মরসুমে আন্দোলন করলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।’’