Advertisement
E-Paper

প্রার্থী এলেও ফিরে তাকান না, ভোট অর্থহীনই রাড়িয়ায়

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মনোনয়ন জমা দিতে রায়গঞ্জ শহরে হইচই, মিছিলের বিরাট আয়োজন হলেও শহর ঘেঁষা রাড়িয়া গ্রামে তার কোনও রেশ নেই।

সৌমিত্র কুণ্ডু 

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩২
 সপরিবার ভূপেন। নিজস্ব চিত্র

সপরিবার ভূপেন। নিজস্ব চিত্র

মোদকপাড়ার বাসিন্দা ভূপেন রায় কিডনি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। পাঁচ মেয়ের মধ্যে এখনও এক জনের বিয়ে দিতে পারেননি। কিডনি বিক্রি করায় শরীর আর চলে না। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে সংসার সামলাতে এখনও হিমসিম খাচ্ছেন। দিনমজুরির কাজে কখনও যান। কখনও শরীরে দেয় না। তাঁর মতো রায়গঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে বরুয়া পঞ্চায়েতের রাড়িয়া এলাকার অন্তত ১৩ জন কিডনি বিক্রির করেছেন জেনে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছিল। গ্রামে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি সহায়তা দিতে শিবির হয়। কিন্তু তার পরেও প্রচারবর্জিতই ছিল এই প্রত্যন্ত অঞ্চল। ফলে রবিবার কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি প্রথম প্রচারে আসছেন জেনে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজনা তৈরি হয় বাসিন্দাদের মধ্যে। কিন্তু তাঁদের হতাশ করেই তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন দেখেও গাড়ি না থামিয়ে সটান বেরিয়ে যান দীপা। দীর্ঘশ্বাস বড় হল গ্রামে।

বুধবার গ্রামে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী রুটমার্চ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মনোনয়ন জমা দিতে রায়গঞ্জ শহরে হইচই, মিছিলের বিরাট আয়োজন হলেও শহর ঘেঁষা রাড়িয়া গ্রামে তার কোনও রেশ নেই। শাসক-বিরোধী যুযুধান কোনও দলেরই ফ্ল্যাগ ফেস্টুন নেই। অনেক খোঁজার পরে হাটখোলার কাছে একটি কুঁড়ে ঘরের বাড়ির টিনের দেওয়ালে কেপিপি প্রার্থীর কয়েকটি পোস্টার নজরে পড়ে। কিডনি বিক্রির করে দু’মাস আগেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন এই গ্রামেরই মঙ্গলু রায়, ভূপেন রায়, হাসান আলি, মানিক বর্মনররা। কেউ বাঁচার তাগিদে, কেউ মেয়ের বিয়ে দিতে, কেউ সংসারের হাল ফেরাতে কিডনি বিক্রির পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন। জেলাপ্রশাসন সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে শিবির করে।

অভাবের তাড়নায় যাঁরা কিডনি দিয়েছিলেন তাঁদের হাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে বাসনপত্র, কম্বল, শাড়ি, লুঙ্গি রয়েছে এমন ‘কিট’ তুলে দেওয়া হয়েছে। অনেককে দেওয়া হয়েছিল পাঁচটি করে মুরগির ছানা। কিন্তু তার পরও কেউ খোঁজ করেননি বলে অভিযোগ, ভূপেনদের। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে কাজের সুযোগ, জীবিকার সুযোগ না হলে এই সমস্যা মিটবে কী করে? ভোটের সময় প্রার্থীরাও তো কত জায়গায় যান। প্রতিশ্রুতি দেন। এই গ্রামে একমাত্র কংগ্রেস প্রার্থী এলেও কথা না বলে হুস করে বেরিয়ে গেলেন। ভোটটাই গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে আমাদের কাছে।’’ একই সুর মানিকের। সিজগ্রামে একটি চায়ের দোকান কোনও রকমে চালান। রোজগার তেমন নেই। মানিকের কথায়, ‘‘ভোট হয়তো দেব। কিন্তু তাতে আমাদের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় জীবনযাত্রার পরিবর্তন আসবে কি না জানি না। তাই হতাশ লাগে একেক সময়।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আক্ষেপ মঙ্গলুর স্ত্রী সুমিত্রারও। বছর চারেক আগে অভাবের তাড়নায় মঙ্গলু কলকাতায় গিয়ে পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে কিডনি বিক্রি করে আসেন। তিন লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। নিজের বাড়ি নেই। শ্বশুরবাড়িতেই তাঁকে থাকতে হয়। সুমিত্রা বলেন, ‘‘কেউই খোঁজ নেন না। ভোট দিয়েই বা কী হবে জানি না।’’

বাম, বিজেপি বা তৃণমূল নেতাদের দাবি তাঁরা মনুষের পাশেই রয়েছেন। সেই বার্তা দিতে শীঘ্রই তারা গ্রামে যাবেন। তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের কথায়, সব জায়গার মতো সেখানেও প্রার্থীরা প্রচারে যাবেন। একই কথা জানিয়েছেন বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম এবং বাম নেতারাও। বামেদের প্রার্থী না গেলেও দলের লোক সম্প্রতি ওই এলাকায় যাবেন বলে তাঁরা দাবি করেন।

Lok Sabha Election 2019 Raria Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy